আমার একলা আকাশ
—মমতা শঙ্কর সিনহা(পালধী)
আমার একলা আকাশ—একচিলতে ছোট্ট ঘর–একখানি আমার মতই অপক্ত তক্তপোষ।
আমার হৃদযন্ত্রটা চলছে ক্ষীণ ধারায়,
দেওয়াল ঘড়িটাও চলছে তার সাথে তালমিলিয়ে–টিক–টিক–টিক।
একবুক আশা নিয়ে এখনও বেঁচে আছে আমার কঙ্কালসার অশক্ত শরীর খানি।
যে সব আমার কাছে ছিলো বাঁচার রসদ—আজ তা বড্ড তেতো।
রাতজাগা পাখির ডাকে–শেষ রজনীপ্রাতে যখন ঊষার অরুণ আলোক ফোটে–আমি ভাবি একলা বসে–তুই আসবি আমার কাছে।
রোজই ভাবি–ভেবেই চলি—কিন্তু ভাবনাটাই আমার সার!
তুই এখন অনেক–অনেক ব্যস্ত,
মস্ত ফ্ল্যাটে তোর ভরা সংসার,
তুই তো এখন নেই ছোট্টটি আর।
আমার কর্তব্য করেছি
আমি–নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ।
সে সব এখন অতীত স্মৃতি,
হ্যা,সে তো ছিলো আমার কর্তব্য!
এত অবহেলা,অব্যক্ত যন্ত্রনার ইতিহাস আমাকে ডোবাতে পারেনি একাকীত্বের অবসাদ যন্ত্রনায়।
দেখি কত লোক আসে এ বৃদ্ধাশ্রমের আঙিনায়,
তাদের হাসি-কান্না মাখার জন্যে আমিও তাতে ভাগ বসাই।
তুই আর আসর সময় পাসনা জানি,
মনে পড়ে–তবু বলি–ভালো আছি–ভালো থাকিস তোরা সবাই।
বেলা পড়ে যায়–বিদায় বেলায় বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট ঘরে আমি একলা–একাই নিরবে দিন কাটাই।
কবি পরিচিতিঃ-
কবি ও বাচিক শিল্পী মমতা শঙ্কর সিনহা (পালধী) ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার নববারাকপুরের স্থায়ী বাসিন্দা (কলকাতা-:৭০০১৩১)। বর্তমানে কবি একজন আইনজীবী। শৈশবকাল থেকেই বাবা-মার সাহাচার্যে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা, সঙ্গীত এবং অল্প কিছুদিনের জন্য কবিতা চর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন। কৈশোরকাল থেকে একটু আধটু গল্প ও কবিতা লেখার অভ্যাস তৈরী হয় কবির।
সংসারের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই কবির হৃদয়ের সাথে আজও ওতোপ্রত ভাবে সাহিত্য চর্চা জড়িয়ে রয়েছে বিনিসুতোর মত। এর ফলস্বরূপ কবির মনের যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তারই মুক্তির সংকল্পে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটেছে কবির লেখনীর মধ্য দিয়ে। কবির “এক গুচ্ছ গল্প” নামক একক গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া দেশে বিদেশে বিভিন্ন সাহিত্য পরিবারের কবিতা পাঠের লাইভ অনুষ্ঠান কবি করে থাকেন। বহু সম্মাননা সনদে কবি সম্মানিত হয়েছেন। বিভিন্ন সাহিত্য পরিবারের যৌথ সংকলনে ইতি মধ্যে কবির স্বরচিত বেশ কিছু গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
কবির শ্রদ্ধেয় পিতৃদেব শ্রীযুক্ত রবিশঙ্কর সিনহা মহাশয়ের (প্রাক্তন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী), কবিট মা সোমা সিনহা ও কবির শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমহাশয় শ্রীযুক্ত শ্যামলকুমার পালধী (হাওড়া জগাছা বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রাধান শিক্ষক, সাহিত্যানুরাগী, দীর্ঘ৩৪ বছরের তার বর্ণময় কর্মজীবন) এদের অনুপ্রেরণা ও স্বতঃস্ফূর্ত সাহাচার্যে কবির সাহিত্যের জগতে পদার্পণ। এছাড়াও কবির কর্মজীবনের ও সংসার জীবনের সঙ্গী স্বামী অ্যাডভোকেট অভ্র পালধী কবিকে সাহিত্য চর্চায় নিরন্তন উৎসাহ প্রদান করে চলেছেন।
কবির লেখা ১৬টি কবিতা ২০২২ আন্তর্জাতিক কলকাতা বই মেলায় পাঞ্চজন্য সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে যৌথসংকলন চতুর্থ ঊর্ণায় প্রাকাশিত হয়েছে এবং এই বইটি কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, দিল্লী, মুম্বই ও চেন্নাই এর বিশেষ লাইব্রেরিতে যথাযথ মর্যাদার সাথে স্থান পেয়েছে।