দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের পর্দা উঠছে আর একদিন পরেই। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবলের মহাযুদ্ধ। ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর এটি।
এখানে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার অন্তর্ভুক্ত ৩২টি জাতীয় ফুটবল দল প্রতিযোগিতা করবে। এটি ৩২ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডায় অনুষ্ঠিত ২০২৬ সালের আসর হতে ৪৮ দলের সমন্বয়ে ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের আয়জনে প্রথম ম্যাচে আল বাইত স্টেডিয়ামে কাতার এবং ইকুয়েডর মুখোমুখি হবে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে, কোনো খেলা এতোটা জনপ্রিয়তা পায়নি। কারণ ছোট থেকে বড়, যুবক থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবাই এই খেলা নিয়ে মেতে থাকে। তবে এই খেলার উদ্ভব নিয়ে এখনও রয়েছে বিতর্ক। ফুটবলের ব্যাপারে একটি সাধারণ উক্তি রয়েছে, ‘ফুটবল ইংল্যান্ড আবিষ্কার করেছে, তবে ব্রাজিল তা পরিপূর্ণতা দান করেছে।’ আবার অনেকে মনে করেন মায়া সভ্যতায়, তো কোনো মুনীর মতে প্রাচীন চীনে- ফুটবল ধাঁচের পায়ে বল গড়িয়ে খেলার উৎপত্তি। আবার এমন দাবি আছে প্রাচীন গ্রিস সম্পর্কেও। পায়ের ব্যবহার কম থাকার পরেও গ্রিকদের খেলাটির অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্য– আধুনিক ফুটবলের সাথে মিলে যায়। আর এই তথ্য পাওয়া যায়, গ্রিক সিটি টাইমস ডটকমের এক প্রতিবেদনে।
গ্রিকরা এই খেলাকে বলতো এপিস্কিরোস। এই খেলায় দুটি দলের মধ্যে একটি বল নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা হতো। প্রতি টিমে থাকতো ১২ থেকে ১৪ জন করে খেলোয়াড়। দুই দলের সীমা নির্ধারণ করতে মাঠের মাঝামাঝি টানা হতো সাদা রঙের লাইন। এটিকে বলা হতো ‘স্কুরোস’। মাঠের শেষ সীমা নির্ধারণে দুই দলের পেছনে টানা হতো আরও দুটি লাইন। স্পার্টায় এই খেলাটি খুবই সহিংস ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, বিপরীত টিমের খেলোয়াড়ের লাইনের ওপর দিয়ে বল ছুঁড়ে দেয়া। তাতে সফল হলেই বিপক্ষ টিমকে পিছিয়ে যেতে হতো। আর ঠিক এভাবে বিপক্ষ দলকে মাঠের শেষ সীমার বাইরে নিয়ে যেতে পারলেই নিশ্চিত হতো বিজয়। খেলোয়াড়দের ক্ষিপ্রতা ও গতিই ছিল সবচেয়ে মূল্যবান দক্ষতা।
গ্রিকদের এই খেলা পরবর্তীতে রোমানরা গ্রহণ করে। রোমানরা এপিস্কিরোসের নামকরণ করে ‘হার্পেসটন’। গ্রিক শব্দ ‘হার্পাস্টন’ থেকে যার উৎপত্তি। যার অর্থ হলো- ছিনিয়ে নেয়া। ফিফা এপিস্কিরোস খেলাকে আধুনিক যুগের রাগবির মতো একটি ক্রীড়ার স্বীকৃতি দিয়েছে। ইতিহাসবিদদের সূত্র মতে, প্রাচীন এই খেলা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বর্ণনা জানা প্রয়োজন। ফিফার দেয়া তথ্যমতে, রোমানদের হার্পেসটনের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত এবং প্রতিযোগিতামূলক ছিল গ্রিকদের এপিস্কিরোস। ফিফা আরও জানায়, খেলাটি ৭০০-৮০০ বছর ধরে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীকালে ব্রিটেন জয়ের পর সেখানে খেলাটির প্রচলন ঘটায় রোমানরা। কিন্তু, তখনও এই খেলায় পায়ের ব্যবহার ছিল খুবই কম।
গ্রিক সিটি টাইমস জানিয়েছে, গ্রিসের এথেন্সের জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে এমন একটি মাটির তৈরি পাত্র রয়েছে। যাতে উরু দিয়ে বল সামলানো এক গ্রিক যুবকের ছবি আঁকানো রয়েছে। ওই পাত্রের নকশা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই পরবর্তীকালে ইউরোপীয়ান কাপ ফুটবলের শিরোপা ডিজাইন করা হয়েছিল। তবে এই আলোচনা এখানেই শেষ হয়। এটি কখনই প্রমাণ করে না যে, গ্রিসই ফুটবলের জন্মদাতা কিংবা আবিষ্কারক। আবার রোমানদেরও এই খেলাকে জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব দেয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিমত রয়েছে।
আধুনিক গবেষকরা ফুটবলের জন্মস্থান হিসেবে ইংল্যান্ডকেই কৃতিত্ব দিতে চান। তবে নিরপেক্ষ জায়গা থেকে চিন্তা করলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। অনেকে মনে করেন, আবিষ্কার নিয়ে এই কানাঘুষার কারণেই ফুটবল মানুষের নিকট আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। জতগতের সকল খেলা একদিন বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু ফুটবল তার এই রাজকীয় মর্যাদা নিয়ে শেষ অবধি টিকে থাকবে। বরঞ্চ অন্য খেলাগুলো যদি কখনও বিলুপ্ত হয় তবে তার জন্য দায়ী থাকবে এই ফুটবল।
তথ্যসূত্র: গ্রিক সিটি টাইমস, ইএসপিএন, গোল