একটি বটগাছের শিশুর আত্মকথা
কলমে :- হিমাংশু সামন্ত
আমি এক বটগাছের শিশু , যার জন্ম তোমাদের বাড়ির ছাদে জলাধারের তলায় শেওলা ধরা ছোট্ট এক প্রকোষ্ঠে, কিংবা প্রাচীরের অজস্র ফাটলের গর্ভে । আমি নিজে হতে উড়ে এসে জুড়ে বসিনি হেথায় । পাখিরা আমার পূর্বপুরুষের ফল খেয়ে হজম করে শেষে বৃষ্ঠার আকারে পরিত্যাগ করেছে তোমাদের ছাদে কিংবা প্রাচীরের ফোকরে । ওখানেই সূর্যদেব, পবনদেব ও বরুনদেব আরও অনেক দেবতার কৃপায় আমার ভ্রুন বড়ো হয়েছে । আমি এখন ছোট্ট চারাগাছ মাত্র , কিন্তু আমাকে যদি তোমরা সমূলে উৎপাটন না করে তোমাদেরই কোনো অপ্রয়োজনীয় জায়গায় স্থান দাও , আমি তোমাদের ছায়া দেবো, ভোরের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত করে তুলবো , তোমরা যখন গরমে আইঠাই করবে একটু বৃষ্টির জলের জন্য , আমি মেঘের দলকে আহ্বান করবো বৃষ্টির জল বর্ষন করবার জন্য । কিন্তু তোমারা কি আমার এই আকুল আবেদন গ্রাহ্য করবে ? তোমরা তো সদাই ব্যস্ত থাকবে বাতানুকুলিত ঘরে বন্দী হয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে টপাটপ করতে ! তারপর কোনো একদিন দারোয়ান , কোতোয়াল ডেকে আমাকে উচ্ছেদ করে ছাড়বে । কিন্তু আমাকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে , আমি তোমাদের লাইলা,আইলা, বুদবুদ, হুদহুদ, ইয়াস ইত্যাদি ইত্যাদি ঝড় তুফানের হাত থেকে রক্ষা করতাম নিজের প্রাণ উজাড় করে হলেও । তোমরা মানবরা নিজেকে শ্রেষ্ঠ জীব বলে কি করে বড়াই করো ? তোমরা তো নিজেদের আরো বড়ো , আরো বড়ো করার জন্য একে অপরের পিছে লাথি মারো । কৈ আমরা বট গাছেরা তো এমন লড়াই করিনা আরো এগিয়ে যাবো বলে । আমি যা পারি তোমরা মানবরা পারবে কোনো পথক্লান্ত পথিককে ছায়া প্রদান করতে ? পারবেনা , তোমরা কেবল অহংকার করতেই পারো নিজেকে শ্রেষ্ঠ জীব ভাবতে । আমার পূর্বপুরুষেরা কতো মুনিঋষির জন্ম দেখে গেছেন । সেই মুনি ঋষিরা আমার পূর্বপুরুষের বেদীতে বসে শিক্ষা দান করে গেছেন । সেই মুনি ঋষিদের উত্তরপুরুষ হয়ে তোমরা বৃক্ষচ্ছেদন করে বিদ্যালয় বানাচ্ছো , সেই বিদ্যালয়ে কি নেই ! বিদ্যুৎ চালিত পাখা, আলো, আরো কতকিছু অত্যাধূনিক জিনিসপত্র । কোথায় , আমার কথা একবারও কি ভেবে দেখেছো ? তোমার বাড়ির ছাদ থেকে সরিয়ে তোমার বিদ্যালয়ের মাঠের সিমানা বরাবর আমাকে স্থান দিতে পারতে । তা না দিয়ে তোমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে এনেছো । আর কি বলব , ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তোমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক ।
কবি পরিচিতিঃ-
নাম :- হিমাংশু সামন্ত
ডাকনাম :- খোকন
দাদু ও ঠাকুমা আদর করে ডাকতেন বিশ্বনাথ আবার কখনো কখনো শুধু বিশু।
জন্ম:- ইংরেজি সন ১৯৭১ এর ২২শে জুলাই। পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার কুলতাপাড়া গ্ৰামে।
পিতা:- স্বর্গীয় গৌর হরি সামন্ত , পেশায় ছিলেন রেলওয়ে কেরানী, সপ্তাহে শনিবার ও রবিবার বাবাকে কাছে পেতেন। কর্মসূত্রে খড়গপুরে থাকতেন।
মাতা :- স্বর্গীয়া পদ্মা রানী সামন্ত, কবির জন্মের প্রায় তিন বছর বয়সে মাতৃহারা হন। সাংসারিক নানার অসন্তোষের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন । তাই মাতৃস্নেহ কি কপালে জোটেনি ।
শিক্ষা:- প্রাথমিক শিক্ষা কুঞ্জপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, মাধ্যমিক শিক্ষা সাহড়দা কালিপদ বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গোবর্দ্ধনপুর উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উলুবেড়িয়া কলেজ থেকে গনিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন নিয়ে বিএসসি পাস । এছাড়া খড়গপুরে ওয়ার্কশপ থেকে তিন বছরের কারিগরি শিক্ষা।
পেশা :- খড়গপুরে রেলওয়ে ওয়ার্কশপে সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।
শখ :- ছোট বেলায় কোনো সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা হয়নি, কিন্তু রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুল সঙ্গীতের খুব ভক্ত, মাঝেমধ্যে খালি গলায় গান করেন মনের আনন্দে। এছাড়া কবিতা লিখে, ছোট গল্প লেখালেখি করেন। কলেজে পড়ার সময় ওয়াল ম্যাগাজিনে কয়েক বার লিখেছেন।
বই প্রকাশ :- কবির লেখা কবিতা অন্য মোহনা, স্বপ্নের নীলাভাষ যৌথ কাব্য গ্ৰন্থে প্রকাশিত হয়েছে । এখনো বেশ কয়েকটি যৌথ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্মাননা:- অনলাইন বিভিন্ন সাহিত্য পরিবারে লেখালেখির জন্য অনেক সম্মাননা প্রাপ্তি ঘটেছে ।