1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
ছোট গল্পঃ- 'জলছাপ' - জয়নারায়ণ সরকার। || দৈনিক সপ্তস্বরা - দৈনিক সপ্তস্বরা
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:১৫ অপরাহ্ন

ছোট গল্পঃ- ‘জলছাপ’ – জয়নারায়ণ সরকার। || দৈনিক সপ্তস্বরা

SRI Bonsai
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

জলছাপ//—জয়নারায়ণ সরকার

 

হাতে-পায়ে বড় হলেও এখনও সে তো ছোটই আছে তার কাছে। প্রতিনিয়ত নানা আবদার নিয়ে হাজির হয় মেয়ে। কোনও কোনও আবদারও রাখতে হয়। তবে যে আবদারটাকে যুক্তিযুক্ত মনে হয়, সেটাতেই ঘাড় নাড়েন বাবা। বাদ দেওয়া আবদারগুলো নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়ার সুরে কথা শোনাতেও ছাড়ে না মেয়েটা। তখন তার মাথায় আদরের হাতটা বুলিয়ে দেন। নাছোড় হলে, বকা-বকি করতেও পিছপা হন না।

মা কখনও বলেন, মেয়েকে আদর দিয়ে তো মাথায় তুলছো। একদিন বুঝবে।

বাবা হেসে বলেন, কী আর বুঝবো। আর যদি কোনও কিছু হয় তাহলেও তোমায় কিছু বলবো না।

মা এবার রেগে বলেন, না বললেও সেই আমাকেই সব কিছু দেখতে হবে।

বাবা আর মায়ের রাতের ডায়লগগুলো খুব চেনা হয়ে গেছে মেয়ের। ছোট থেকে এক ডায়লগ শুনতে শুনতে কান যেন ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।

থাকতে না পেরে এক রাতে মেয়ে বলে ওঠে, তোমাদের ডায়লগে কোনও ভ্যারিয়েশন নেই। দর্শকরা বড্ড বোর ফিল করে।

মা একটু গলা তুলে বলে, বোর ফিল করুক। আমি যা দেখছি, তাই বলছি।

মেয়ে দ্যাখে বাবা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এবার স্বস্তির শ্বাস ফেলে অন্য ঘরে চলে যায় মেয়ে।

***

বাবা খানিকটা এরকমই বরাবর দেখে এসেছে। বাবার জীবনে কোনটা সিরিয়াস, ঠিক বোঝা যায় না।

স্কুল পেরিয়ে কলেজে যাওয়ায় ছেলে বন্ধুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে মেয়ের। কোনও কোনও দিন দু-একজন ছেলে বন্ধু বাড়িতে এসে হাজির হয়। তাদের দেখে মায়ের মুখের চেহারা ক্রমশ বদল হতে শুরু করে। অন্যদিকে বাবা একেবারেই নির্বিকার। খোশ মেজাজে খবরের কাগজ পড়েন। মা তড়িঘড়ি বাবার ঘরে ঢুকে যান।

ওভাবে মাকে ঢুকতে দেখে বাবা বলে, তোমার আবার কি হল?

মা এক ঝটকায় বাবার পাশে এসে নিচু স্বরে বলে, মেয়ের কাণ্ড দেখেছো? এখন তো ছেলে বন্ধুরা বাড়িতে আসতে শুরু করেছে।

বাবা খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে মৃদু হেসে বলে, তাতে কী হয়েছে? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল নাকি?

এ রকম উত্তর পেয়ে মা খানিকটা হকচকিয়ে যায়। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, না, মানে মেয়ে বড় হচ্ছে তো, তাই বলছিলাম।

বাবা এবার খানিকটা রসিকতা করে বলে, তাহলে মেয়েকে ঘরে বেঁধে রাখো। তুমি নিশ্চিন্ত থাকবে।

মা আর কথা বাড়ায়নি, ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলে, বুঝবে, বুঝবে। সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবে।

পিসতুতো দিদির বিয়েতে খুব আনন্দ করেছিল মেয়েটা। বাসর ঘরে ওর গান মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। নতুন জামাইবাবু নীলুদা এখনও সেই মাতিয়ে রাখা রাতটার জন্য তারিফ করতে ভোলে না।

বিয়ের পরদিন নীলুদার সাথে থাকা এক বন্ধু নানা ভাবে তাকিয়েছিল, বুঝতে পারলেও আমল দেয়নি। কোনও কিছু নিয়ে আর ভাবেনি সে।

হ্যাঁ, ভাবতে হয়েছিল। মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েছিল। এখানেও বাবা নির্বিকার থেকে অস্ফুটে বলেছিলেন, এখনই বিয়ে দিতে হবে? ও আর একটু পড়াশোনা করুক। চাকরি-বাকরি জুটিয়ে তারপর…

মা একটু উঁচু গলায় বলে, থাক, আর মেয়েকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। মেয়েদের বিয়ের বয়স চলে গেলে যে কী হয়, তা আমার অনেক দেখা আছে। পড়ার যদি ইচ্ছে থাকে, পরেও তো পড়তে পারে। সে কথা ওদের বললেই হয়।

বাবার মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

***

কিংশুকের সঙ্গে আর কোথাও যেতে চায় না স্নেহা। একবারই গিয়েছিল হানিমুনে। সিকিমের এক গ্রামে হোম-স্টে ছিল। ওখানে পৌঁছেই কিংশুক মদ খেয়ে চূড় হয়েছিল। স্নেহাকেও পীড়াপীড়ি করেছিল খাওয়ার জন্য। নির্বিকার মুখে না করেছিল সে। ওই ক’টা দিন নিভৃত, নিরালায় একাকী কাটাতে হয়েছিল স্নেহাকে। ফিরে আসার পর এমন ভাব করতে হয়েছিল, যেন ওরা দুজন-দুজনকে বুঝে নিয়েছে সহজেই। অবশ্য স্নেহা বুঝেছিল, কিংশুক একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষ। নিজে বুঝলেও কাউকে বুঝতে দেয়নি।

শ্বশুর, শাশুড়িকে নিয়ে নির্বিকার হয়ে দিন কাটায় স্নেহা। মাঝে মাঝে বাবা-মা আসে দেখা করতে। তখন তাকেই সঙ্গ দিতে হয়। কিংশুক ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফোনে।

কিংশুকের ওই অবস্থা দেখে বাবা নির্বিকার মুখে বলেছিল, বড় কোম্পানির বড় পোস্টে চাকরি করে তো, তাই অফিস থেকে ফিরেও ব্যস্ত থাকতে হয়।

মা অবশ্য বাবার কথায় কোনও গুরুত্ব দেয়নি বরং বলেছিল, কয়েক দিন তোর বাড়িতে থাকলে একঘেয়েমিটা কাটে।

মুখে সামান্য হাসি এনে বাবা চটপট বলেছিল, এখন থেকে বাড়িতে নতুন নতুন কাজের হদিশ করো। দেখবে একঘেয়েমি আর আসবে না।

পাশে দাঁড়িয়ে মেয়ে নির্বিকার মুখে হেসেছিল।

চলে যাওয়ার সময় মায়ের চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। বাবা নির্বিকার মুখে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলে পা বাড়িয়েছিল রাস্তার দিকে। কিংশুক ফোনে ব্যস্ত থাকায় ওর সাথে আর কথা বলা হয়ে ওঠেনি।

রাতে বাড়ি ফিরে মা ফোন করেছিল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর মায়ের গলা ধরে আসে। পাশ থেকে বাবার গলা স্পষ্ট শুনতে পায় স্নেহা। মেয়েটা আমার মতো… আর শুনতে পায় না। ফোনটা কেটে যায়।

অন্যদিকে সে বুঝতে পারে ইদানিং কিংশুক অফিসের কাজের কথা বলে অনেক রাত অবধি চ্যাটে ব্যস্ত থাকে মোবাইলে।

মাঝে মাঝে ভিজে ওঠা বালিশের উপরে বাবার নির্বিকার মুখের জলছাপ স্পষ্ট দেখতে পায় স্নেহা।

 

লেখক পরিচিতিঃ-

নাম : জয়নারায়ণ সরকার

পিতা : বীরেন্দ্রনারায়ণ সরকার (বীরু) ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী-সাহিত্যিক-সম্পাদক ও সাংবাদিক। বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে এসে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁর লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ ও গল্পের বই সাহিত্য জগতে বিশেষ ছাপ ফেলে। ‘বারাসাত বার্তা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তাঁর সম্পাদনায় দীর্ঘ ৪০ বছর প্রকাশিত হয়। পুতুলরানি সরকার-এর কনিষ্ঠ পুত্র জয়নারায়ণ সরকার (ডাকনাম বুলু) ১৬ সেপ্টম্বর ১৯৬৯ সালে বারাসাতে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষা : বি.কম স্নাতক।

পেশা : গ্রাফিক্স ডিজাইনার। বর্তমানে ‘দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির’ থেকে প্রকাশিত ‘মাতৃশক্তি’ পত্রিকায় কর্মরত।

রচনাবলী: এ বছর (২০২২) কলকাতা বইমেলায় জয়নারায়ণ সরকারের ছোট গল্পের সংকলন ‘গল্পেরাও কাছে ডাকে’ প্রকাশিত হলে পাঠকমহলে জনপ্রিয় হয় বইটি।

পুরস্কার: ‘প্রতিলিপি’ ই-ম্যাগাজিন থেকে সম্মাননা প্রাপ্ত।

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি