1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
ছোট গল্পঃ- "ভাগাভাগি" —ছাইফুল আলম সেলিম। || দৈনিক সপ্তস্বরা - দৈনিক সপ্তস্বরা
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

ছোট গল্পঃ- “ভাগাভাগি” —ছাইফুল আলম সেলিম। || দৈনিক সপ্তস্বরা

SRI Bonsai
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

ভাগাভাগি 

—ছাইফুল আলম সেলিম

 

“বাবা,আসতে পারি?”

“কে?সাগর? আয় আয়,বাবার ঘরে আসতে অনুমতি লাগে?”

“কেমন আছো বাবা?”

“ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?”

“আমিও ভালো আছি।”

“কখন আসলি?”

“এইতো,এসেই তোমার কাছে আসলাম।

ঔষধগুলো ঠিকমতো খেয়েছ তো?”

“কি যে বলিস!বৌমার জন্য ঔষধ না খেয়ে পারা যায়?”

বৃদ্ধ পিতার মুখে নিজের স্ত্রীর এমন প্রসংশা শুনে সাগর খুশি হয়।অন্যদিকে একমাত্র ছেলে চাকুরীস্থল থেকে বাড়িতে এসেই বাবার খোঁজ নিচ্ছে, এই ভেবে আরমান সাহেবের মনটাও আনন্দে ভরে উঠে।ছেলেকে তাগিদ দিয়ে আরমান সাহেব বলেন-

“যা সাগর,এখন বৌমার ঘরে যা।পরে আবার আসিস নাহয়।”

“ঠিক আছে,যাচ্ছি বাবা।তবে তোমার সাথে একটা কথা ছিলো।”

“কি কথা?বলে ফেল্।”

সাগর একটি টাকার বান্ডেল আরমান সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো-

“এখানে কিছু টাকা আছে।নাও বাবা,এই টাকাগুলো তোমার কাছে রেখে দাও।”

“টাকা?আমি টাকা দিয়ে কি করবো?”

“মাঝেমধ্যে খরচ করবে।”

“আমি টাকা খরচ করবো কোথায়?তাছাড়া আমিতো প্রায় সারাক্ষণ বাড়িতেই থাকি।আমাকে নয়, বৌমার কাছে রেখে দে,যা।”

“না বাবা,এই টাকা আমি তোমার জন্য এনেছি।প্লিজ নাও।”

“এখানে তো মনে হচ্ছে অনেক টাকা?”

“অনেক নয়,মাত্র দশ হাজার।”

“বলিস কি!দশ হাজার!”

“কেন?দশ হাজার কি খুব বেশি টাকা বাবা?”

আচ্ছা সাগর,তোকে একটা প্রশ্ন করি,রাগ করবি না তো?”

“কি যে বলোনা!রাগ করবো কেন?”

“তোর এই টাকাটা কি হালাল?”

আরমান সাহেবের এমন প্রশ্ন শুনে সাগর চমকে উঠে।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-

“বাবা,আমিও তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো।”

“তোর আবার কি প্রশ্ন?”

“আছে।”

“আচ্ছা বল্।”

“তুমি কি জীবনে কোন দিন হারাম উপার্জন করেছ?”

“না রে বাপ,আমি জীবনে কোন দিন একটি টাকাও হারাম রোজগার করিনি।”

“আমার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু তোমার হালাল পয়সায় তৈরি হয়েছে,ঠিক বলেছি বাবা?”

“হ্যাঁ,ঠিকই বলেছিস।”

“তাহলে তুমিই বলো,এই বিশুদ্ধ রক্তে কি কখনো হারাম মিশতে পারে?”

শেষ কথাগুলো বলতে গিয়ে সাগরের গলা ধরে আসে।আরমান সাহেব এতোক্ষণ বিছানায় বসেছিলেন।ছেলের কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে চশমাটা পড়তে পড়তে তিনি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।সাগর স্পষ্ট দেখতে পেলো আরমান সাহেবের চোখের কোনায় জল চিকচিক করছে।সাগর দ্রুত গিয়ে জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত আপাদমস্তক সৎ পিতাকে পরম শ্রদ্ধায় জড়িয়ে ধরে।আরমান সাহেবও স্নেহের অতিসহ্যে সন্তানকে বুকে টেনে নেয় এবং কপালে চুমু খায়।

বিয়ের পর থেকে সাগরের স্ত্রী নীলা আরমান সাহেবকে যতোই দেখেছে,ততোই শ্রদ্ধায় তার মস্তক অবনত হয়েছে।কিন্তু আজ যেন সেই দেবতুল্য মানুষটার একদম ভেতরটা দেখে ফেলেছে।নীলা কিছুক্ষণ আগেই দরজায় উপস্থিত হয়েছে।ঘরে ঢুকার আগে পিতাপুত্রের এমন আবেগঘন পরিস্থিতি দেখে থমকে দাঁড়ায়।কিন্তু এবার সে ভিতরে প্রবেশ করে এবং নিজেও তার পিতৃতুল্য শ্বশুরকে জড়িয়ে ধরে।আরমান সাহেব তাঁর স্নেহের হাত দুটো সাগর এবং নীলার কাঁধে রেখে উদাস কন্ঠে বলতে থাকেন-

“জানো বৌমা,আমার ছেলে কি বলেছে?ওর শরীরের রক্ত আমার সৎ উপার্জনের পয়সায় তৈরি।এইজন্য সেই রক্তে কখনো হারাম মিশতে পারেনা!বৌমা,একজন আদর্শ পিতার কাছে এই জগৎসংসারে এর চেয়ে খুশির,এর চেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে বলো? আজ আমি মহা আনন্দিত।আজ আমার কোন কষ্ট নেই।দেখে যাও সাহানা,দেখে যাও,তোমার ছেলে আজ খাঁটি মানুষ হয়েছে।ঠিক যেন তোমার মতো খাঁটি।

ওহহো বৌমা,সাহানাকে ডাকছি কেন?সে তো আসবেনা।সে তো বড্ড অসময়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।আচ্ছা বলতো,এটা কি ঠিক করেছে?”

পূবের জানালাটা খোলা।সেই জানালা দিয়ে ঝিরঝির বাতাস ঢুকছে আরমান সাহেবের ঘরে।ছেলেকে কাছে পেয়ে মনেও বইছে প্রশান্তির বাতাস।কিন্তু এখন তাঁর প্রয়াত প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য মনটা আবার হাহাকার করছে।

আবেগতাড়িত আরমান সাহেব বলে চলেন-

“বৌমা,ছোট চাকুরী করেছি।কম বেতন পেয়েছি।মাসের শেষ দশদিন যেনো কোন ভাবেই কাটতে চাইতোনা।তবুও সেই অবাক মানুষটা মোটা ভাত মোটা কাপড়ে হাসিমুখে জীবন পার করেছে।কোনদিন আমার সাধ্যের বাইরে কিচ্ছু চায়নি।মাঝেমধ্যে সে আমার হাতখানা তার মাথায় রেখে বলতো, আমার দোহাই লাগে সাগরের বাপ,কথা দাও,যত কষ্টই হউক হালাল পথ থেকে বিচ্যুত হয়োনা।

সে জানতো,আমি কখনোই এমন কাজ করবো না। তবুও বার বার আমাকে মনে করিয়ে দিতো।আজ বুঝতে পেরেছি,আমার ছেলেটাও ঠিক তেমনি হয়েছে।প্রিয় বৌমা,তুমিও সাহানার মতো অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে আমার ছেলেটাকে আজীবন পাহারা দিও।”

দুটি কৃতজ্ঞ মস্তক আরমান সাহেবের বুকে লেপ্টে আছে।হঠাৎ তিনি টের পেলেন,উষ্ণ জলের যেনো স্রোত বইছে তাঁর বুকে।টাকাগুলো সাগরের হাতেই ছিলো।আরমান সাহেব দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টে সাগরকে জিজ্ঞেস করলেন-

“এই সাগর,এতগুলো টাকা তুই কেমনে জোগার করলি?”

এমন প্রশ্ন শুনে সাগর এবং নীলা বাবার পাঁজর ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর সাগর বলে-

“আমার ব্যক্তিগত খরচ থেকে বাঁচিয়ে জোগার করেছি বাবা।”

ছেলের উত্তর শুনে আরমান সাহেব হো হো করে হেসে ফেলেন।

“পাগল ছেলের কান্ড দেখো!বাবার জন্য তুই আত্মাকে কষ্ট দিয়েছিস?এবার টাকাগুলো আমার কাছে দে।”

আরমান সাহেব টাকাগুলো হাতে নিয়ে সেখান থেকে চার হাজার টাকা নীলাকে,চার হাজার টাকা সাগরকে দিয়ে বাকী দুই হাজার টাকা নিজের কাছে রাখলেন।সাগর ধরফর করে উঠলো।

“এটা কি করলে বাবা?”

“কেন?ভাগাভাগি করলাম!তুই হয়তো কয়েকমাসে নিজের খরচ বাঁচিয়ে বাবার জন্য টাকা জোগার করেছিস।আর আমি খরচের আগেই পুত্র এবং পুত্রবধূর জন্য অগ্রিম খরচ বাঁচিয়ে আট হাজার টাকা জোগার করে ফেললাম!” বলেই আরমান সাহেব হো হো করে হেসে ফেললেন।সঙ্গে সঙ্গে সাগর এবং নীলাও হেসে ফেললো।

এবার সাগর-নীলা দম্পতি পিতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো।নিঃসঙ্গ আরমান সাহেব আবারও একা হয়ে গেলেন।আজ তাঁর মনটা চরম হাহাকার করছে।আজ তাঁর খুব করে প্রিয়তমা স্ত্রী সাহানার কথা মনে পরছে।তিনি ধীরে ধীরে দেয়ালের কাছে গেলেন এবং একদৃষ্টে একটি ছবির দিকে তাকিয়ে রইলেন।বারবার চশমা খুলে চোখ মুছে আবার পরলেন।একসময় বিরবির করে কী যেন বলতে বলতে হাতের টাকাগুলো আবারও ভাগাভাগি করে একভাগ পকেটে রেখে আরেকভাগ যত্ন করে আলমিরাতে রেখে দিলেন।

 

লেখক পরিচিতিঃ-

নামঃ ছাইফুল আলম সেলিম।

কবি ছাইফুল আলম সেলিম ১৯৭৩ সালের ১৫ ই জানুয়ারী ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের চর সিরতা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মোঃ নজরুল ইসলাম এবং মাতা মোছাঃ সুফিয়া খাতুনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।

শিক্ষা জীবনঃ তিনি ময়মনসিংহ শহরস্থ খাগডহর হোসাইন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি,আনন্দ মোহন সরকারী কলেজ থেকে এইচ এস সি, ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে বি এ এবং আনন্দ মোহন সরকারী কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

পেশাঃ তিনি ২০০৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র‍্যাকে, ব্র‍্যাক শিক্ষা কর্মসূচির সিনিয়র শাখা ব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব পালন করেন।২০১৬ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে ময়মনসিংহে উনার নিজ বাড়িতে ‘ইসলাম এগ্রো ফার্ম ‘ নামে একটি কৃষি খামার গড়ে তুলেন।বর্তমানে তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি উক্ত ফার্মের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

পছন্দঃ কবি ছাইফুল আলম সেলিম ছোট বেলা থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।ফলে বই পড়া তার অন্যতম পছন্দের একটি কাজ।তাছাড়াও বঙ্গীয় লোক সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কাজ করতে পছন্দ করেন।

রচনাবলীঃ ২০২১ সালে ইচ্ছে তরী প্রকাশণী থেকে ‘মেঘ পিয়নের বাড়ি’ নামে একটি যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালের একুশে বই মেলায় একটি স্বনামধন্য প্রকাশণী থেকে ‘জোছনার চুম্বনে ভালো থেকো তুমি ‘ নামে একটি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

এছাড়াও এবছর কবি Mohammad Mujahidul Islam এর সম্পাদনায় ভ্রাম্যমাণ প্রকাশণী থেকে যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘বসন্ত বিলাপ’ এবং কবি Rakibuzzaman Shaad এর সম্পাদনায় নব কণ্ঠ প্রকাশণী থেকে ‘ বিলুপ্ত অতসীর অশ্রু’ নামে আরেকটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে।

পুরস্কারঃ বিভিন্ন অনলাইন সাহিত্য সংগঠন ও সাহিত্য পত্রিকা থেকে অসংখ্য সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন।

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি