1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
'পঞ্চ কাব্য' - সুনির্মল ঘোষ। 'কাব্য কথা' - দৈনিক সপ্তস্বরা
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

‘পঞ্চ কাব্য’ – সুনির্মল ঘোষ। ‘কাব্য কথা’

Jannatul Abodhi
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

কাব্য-১

বিপ্লব বেঁচে থাকে
সুনির্মল ঘোষ

তখন প্রকৃতির মিলনের সময়,
ফুলে ফুলে পরাগমিলন ঘটিয়ে ফিরে যাচ্ছে প্রজাপতি মৌমাছি দল
তাদের বাসায় ।
স্তব্ধ আকাশ প্রভাকরকে বিদায় দিয়ে হাট বসাল তারাদের।
ন্যাকা কৌমুদী আলো ধার নিয়ে বসে আছে তারাদের মাঝে,
সেই কোন বিকেল থেকে
বিপুল বেগে এক খরস্রোতা পাথর ভাঙানোর চেষ্টায়
গান গেয়ে চলেছে কোন নিশি থেকে
কলরবকে খুন করে।
মুঠো মুঠো নিঝুমতা নৈঃশব্দ্য ছড়িয়ে দিয়েছে বনানীর আঁচলে আঁচলে ।
পার্বতী কে সঙ্গে বুলেট এলো,
মুহূর্তে পার্বতীর আলোয় চারধারে হয়ে উঠলো ঝলমলো।

সারা দেশ বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল ।
শহরের নামী দামী কলেজের ছাত্র ছাত্রী রা দল বেঁধে
নিশ্চিত আশ্রয় ছেড়ে
গাছের কোটরে কোটরে
বনে বনস্থলে।
উদ্যত রাইফেল হাতে দেশ রক্ষাকারীদের শিরায় শিরায় আগুন ।
কাঁদছেন দেশহিতকারী,
মাঝে মাঝে আগুনে ঝলসে নিচ্ছেন চোখ ।
সেই তাপে গনগনে আচ মুখে নিয়ে
হুঙ্কার __ ” খতম করো নকশাল কো।
মাঝে মাঝে নব ঘুরিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছেন এ সি।

দূরে দাঁড়িয়ে স্থবির মনীষীদের মূর্তি কাঁদছেন,
কখনো কখনো ধর থেকে মুন্ডু নামিয়ে শক্তি জোগাচ্ছে ন আন্দোলনে।
দগ্ধ স্কুলে ঘন্টা বাজছে,
পড়ানো হচ্ছে জীবনতত্ত্ব।
হুঙ্কারে কাঁপছে দেশ।
মুক্তিকামীদের আস্ফালনে
” রাইফেল ই শক্তির উৎস ” শ্লোগানে মিছিলে কামানের গর্জনে
নিরীহ মানুষের রক্তে ভাসছে দেশের নিকাশি নালা নর্দমা।

পার্বতীর চোখে চোখ বুলেটের
রাগ বুলেটের শরীরে তখন ছুটন্ত ঘোড়া।
তুই নাকি ফিরে যেতে চাস আমাদের ছেড়ে নিজ গৃহে ”
পার্বতী হাসে ম্লান মুখে,
শরীরে তখন মাতৃত্বের আনন্দ
অবসাদ ।
ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে চাঁদ ,
দলের সবথেকে বড় নেতা শুভর দাঁড়িগোফে ঢাকা মুখ।
চোখের ইঙ্গিত
বলিষ্ঠ কাম তখন ছুটে আসে দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
প্রেসিডেন্সির ছেলে তখন অদৃশ্য তুলিতে ছবি আঁকে,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্বতীর নিষিদ্ধ প্রান্তরে
সময় পুড়ে যায় না টানা সিগারেটের সাথে।
তারপর কতরাত ঘাসের গালিচায়
নগ্ন হাত দুজন দুজনের গলায় ।

শুভ টের পায়,
শুভর বুক কাঁপে অজানা আশঙ্কায় ।
দলে ফতোয়া জারি __ শুভর নেতৃত্বে
মৃত্যুদন্ড পার্বতীর ।

বুলেটের রিভালভারের হাত ওঠার আগেই__
অদৃশ্য শক্তির গুলি ঝাঝঁরা করে বিপ্লবী মায়ের শরীর ।
পার্বতী লুটিয়ে পড়ে,
রক্ত নদীর জলে ছিটকে পড়ে ।
অস্ফুটে পার্বতী বলে,
“আসতে দিলিনা পৃথিবীতে
আগুনের স্ফুলিঙ্গ কে
শুভর সন্তানেরে।”
ঝুম ঝুম নিঝুমতা নামে চারধারে।
বুলেট একবার দেখতে পায়
শুভর পিস্তল থেকে তখনও ধোঁয়া বেরচ্ছে ।

বিপ্লব শেষ হয়ে গেছে __
বিপ্লব মরে না,
যুগ যুগ বেঁচে থাকে
নিপীড়িতের শরীরে শরীরে ।

কাব্য-২

বড় অসময়ে এলে

সুনির্মল ঘোষ

বড় দেরী করে এলে আমার অসময়ে
মধ্য যামে রাত পূর্ণতা পেতে আর কিছু বাকী।

এখন আমার শরীর জুড়ে শুধুই দুর্দিন,
প্রতিটি গ্রন্থীতে গ্রন্থীতে শয়ে শয়ে সেতার বাজে ভুল সুরে ভুল রাগে।
সেই এলে বড় অসময়ে এলে
ছোট্ট ঝিনুকমালা।
বুকের ভেতরে শুধু মুক্তো সাজানো।
মনে পড়ে ঝিনুকমালা,
সেই রাতে অদৃশ্য বাঁশির সুরে
তুমি কাছে এলে অবগুন্ঠন খুলে__
মনে হোল সাতটা তাজমহল ধ্বংস করে হাজার শিল্পী এসে গড়েছে তোমাকে।

ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই বুনেছে শৈল্পিক বাসা তোমার চোখ থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে।
আমি যেন ধ্যান মগ্ন
সাতটি ঋষির সঙ্গে ।

তুমি কাছে এলে __
তখনও কর্ণফুলী নদীতে হেঁটে যায় পথিকের দল,
সাইকেল আরোহী,
বড় অসময়ে এলে ঘোর দুর্দিনে।
তোমার গায়ের গন্ধে স্বয়ং বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গ হয়।
কোটি কোটি মৌমাছি ভীড় করে ঘরের বাইরে ও ভিতরের সব কটা ঘর।

তোমার অধর তখন খুঁজে ফেরে
আমার কপোল থেকে চিবুক ছুঁয়ে ওষ্ঠের ফাঁক ফোকর।
তোমার তপ্ত শ্বাস আমার শরীরে উদাসী বাতাস,
কাঁপা কাঁপা আমার দুই হাতে
তখন পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় মাখামাখি বুকের দুই পাহাড় চূড়া
ধীরে ধীরে গন্ডুষে পান করি কস্তুরী নাভির সব সুধা রস।

তারপর ___
ধীরে ধীরে জোয়ার আসে শীতলক্ষ্যা নদী জুড়ে ।
দুই উরুর সঙ্গমস্থলে
সবাই জানে
সুযোগে কোটি কোটি শুয়োপোকা রোয়া তুলে ঘোরে শরীরে মাথায় ।

বড় অসময়ে এলে, শীতের গভীরে
হাজার এক্সপ্রেস ট্রেন টেনে নিয়ে যায় সাতটা বাদামি ঘোড়া ।
তুমি ফুসে ওঠো পদ্মা মেঘনা এক হয়ে ।
অসহায় আমি ___
তুমি এলে বড় অসময়ে ঘোর দুর্দিনে ।
গভীর রাতে একগোছা রজনীগন্ধা হয়ে।

প্রেম বাঁধার উপলখন্ড ভাঙে
আসে ভীষন নীরবে নিঃশব্দে।
মানে না কিছুই
এসো তোমাকে জীবনের ধারাপাত পড়াই ।

কাব্য-৩

একটা অর্ক
সুনির্মল ঘোষ

ধূসর আবছা আলো
পিঠে নিয়ে ভূতুমের দল,
গাছের কোটোর থেকে ভাঙা পাঁচিলের ফাঁক গলে
উড়ে যায় অন্তহীন আঁধারের পথে।
কালো ছায়া নেমে রাতের কালো আলো বিষন্নতায় ডুবে নেমে আসে সরোবরের বুকে।
ছায়া দোল খায় মায়ের মুখে,
মায়ের বয়স হয়েছে এখন ।
বহুদূরে সিগন্যাল না পেয়ে
ফাঁকা মাঠে থেমে থেমে গোঙাতে থাকে মালগাড়ি এক।
অনেক রাত মালগাড়ি ঝিমোয়
আমার মায়ের মত এতো পথ হেঁটে।

মায়ের আঁচলে এখনো লেগে আছে গ্রীষ্মের দুপুর
ঈশ্বর পাঠশালা যেতে গিয়ে
এই আঁচলই খুলে যেত মাথার উপর….
ছাতার মতন।
সন্ধ্যায় আচের আগুনে মায়ের তপ্ত মুখে আমাদের আহারের খোঁজ।
বর্ষায় প্রকৃতির যৌবনে
নাচন গাছের ডালে
ব্যাঙের গলায়
মায়ের আঁচলে তখন বৃষ্টির ছাপ।
সকালে খিচুড়ি হলে
বিকেলে দুধ সাদা ভাত
ফুটে থাকে কাশফুল হয়ে।
শরৎ এলে আকাশী রঙের পোশাকে আমাকে সাজিয়ে
ভাসিয়ে দিত সাদা কাগজের নৌকায়,
টগর আর শিউলির বনে।
সন্ধ্যা হলে হাত ধরে নিয়ে যেত ঠাকুরের প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে।
চুপচুপি হেমন্ত এলে
শেষ ডাকে বাবাকে চিঠিতে জানাত তার জীবনের কথা,
অবশ্যই ভুল বানানে।
শীতের পোশাক তখন বড়ই।

কাব্য- ৪

জিনিয়া যদি কোনোদিন
সুনির্মল ঘোষ

জিনিয়া তোমাকে ভালবাসতে চেয়েছিলাম
ছাদের নির্জন চিলেকোঠায়
দক্ষিণের বারান্দায়
শেষ সিঁড়ির ধাপে
অষ্টমী পুজার রাতে
হলুদ ঝর্ণা আঁকা তোমার মায়ের শাড়িটা যেদিন পড়েছিলে
যেদিন রেললাইনের পাশে কাশফুলের ঝোপে দাঁড়িয়ে সেলফী তুলছিলে

প্রতিবারই সব ইচ্ছে গুলো
নিয়ে একছুট্টে পালিয়ে গেল
নির্জন দামাল বাতাস

নীল বেলুনে চড়ে কতবার
একগোছা কামিনী ফুল
জিনিয়া তোমাকে দেব বলে
লুকিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম
সবুজ পাখিদের দেশে___
তুমি চোখ মটকে হেসে চলে গেলে

জিনিয়া পাঠশালা থেকে
আসার পথে
বৃষ্টিতে ভিজছিলে
আমি একটা পদ্মপাতা নিয়ে
দাঁড়িয়েছিলাম তোমাকে বৃষ্টির
হাত থেকে বাঁচাতে
বৃষ্টি আঁকছিল তোমার শরীর
গোপন ক্যানভাসে
আগুনের ভয়ে যাইনি তোমার কাছে
বৃষ্টি তো আগুন নেভাতে পারে না
দাউদাউ করে জ্বলে জালায়।
জিনিয়া কোনোদিন পারবো
একটা মালা দিতে তোমার গলায়?
এসো জিনিয়া আমার কাছে
মেঘ হয়ে
কখনও চমকানো বিদ্যুত
কখনো বা বজ্রপাত হয়ে
পাল তোলা নৌকোয় কোনোদিন কি আসবো না তীরে
যদি কোনোদিন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ো
সিক্ত হবো শরীরে , স্বপ্নে আপাদমস্তক ।

কাব্য- ৫

জন্মভূমি

সুনির্মল ঘোষ

এখন রোদ জ্বলা প্যাচপ্যেচে ঘামে ভেজা
বাদুড়ের পিঠে চাপা
ক্লান্ত সন্ধ্যা নেমে এল প্রাঙ্গনে
অথচ তোমার মুখে ধূসর পাহাড়ের মাথার উপরে ভেসে থাকা
নীলচে মেঘের বুক চিরে
এক মায়াবী আভা
তোমার দুচোখ জুড়ে সবুজ পাখি র ডানায় মাখানো সোনালী প্রভা
চোখের মণি জুড়ে খেলা করে
একরাশ অবুঝ স্বপ্ন
তোমার শরীরের উদাসীন স্পর্ধা দেখে
ফিরে যায় হরিণের দল।

নির্বিকার জিনিয়া হেঁটে যায়
এক বন্দর থেকে আর এক বন্দরে
পৃথিবী জুড়ে যে ধ্বংসলীলা
নারকীয় হত্যা আর রক্তের খেলা
অন্ধ মানবিকতা
পৃথিবীর সব বিচার সভায়
একে একে কাঠগড়ায় তুলে জিনিয়া শাসায়
ঠুলি পড়ে বসে থাকা বিচারক
জিনিয়াকে দেখে দলবেধে
হেঁটে হেঁটে চলে যায় নদীর মোহনায়।
জিনিয়া কে দেখে সব পাখি ফিরে যায় সঠিক ঠিকানায়
হিংসা ভুলে শ্বাপদেরা মাঠে গিয়ে ঘাস খায়
চলো জিনিয়া আমরা যাই সমুদ্র স্নানে
মাঝরাতে তারাদের দল একে একে নেমে যায় সমুদ্রে
শুধু অবগাহনে
সমুদ্র কে দেবে চলো
এই পৃথিবীর যাবতীয় জঞ্জাল
তারপর ওঁকার ধ্বনিতে বলব
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী
তোমার সুরেলা কন্ঠে গেয়ে দেবে গান ____
যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি

জিনিয়া তোমার গানে
সবাই চিনে নিক নিজ নিজ বাসভূমি।

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি