1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
পঞ্চ কাব্যঃ- কবি মৃদুল সাহা - দৈনিক সপ্তস্বরা
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

পঞ্চ কাব্যঃ- কবি মৃদুল সাহা

Jannatul Abodhi
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

কাব্যঃ- ১
শিরোনাম–বন্দি জীবন
কলমে –মৃদুল সাহা।

শেকলে বাঁধা বন্দি জীবন
নিরাশ্রয় পৃথিবীর কাছে খোঁজে
আপন ঠিকানা—-

মুক্তির নিঃশ্বাসে নেই অভিমান
বেঁচে থাকার আক্রোশে
রাশি রাশি ঘৃণার বিবর্নতা–

চিড় ধরছে সবুজের বুকে
উত্তাপে পুড়ছে চারিদিক
বাদলের কালো চোখে কষ্টের করুনা
বৃষ্টি ফোটারা কান্নায় আকুল।

কষ্টের মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে
সারা আকাশ—মুছে দিয়ে সব রং
জীবনের তৃষ্ণা মেটায় মরিচীকা —
সজল দিগন্তে নিভু নিভু প্রদীপ !

অসংখ্য নগ্ন হাত তীক্ষ্ণ নখরে
খামছে ধরে মায়ের কোমল স্তন
কেড়ে নেয় জীবন –জীবিকা
বেঁচে থাকার বিশ্বাস –আধার।

বাতাসে ছড়িয়ে গেছে বারুদের গন্ধ
— কার্বনড্রাই অক্সাইড
লোভাতুর চোখে সন্দেহ -হিংস্রতা
নিলর্জ কাড়াকাড়ির উল্লাস।

অদৃশ্য চোখের জলে ভিজে যায়
আকাশ –মাটি–জল
কেউ রাখে না কারো খবর
থরে থরে পড়ে থাকে জীবন্ত শব
আর অবাঞ্ছিত অভিলাষ —-!!!

 

কাব্যঃ-২
শিরোনামঃ শ্বেত গোলাপ

কলমেঃ মৃদুল সাহা

মাঝ রাতে তুমি গোলাপ হও
আমি তখন হই অন্ধ মিলটন,
রাতের তারাদের মৌন বিলাসে
জানিনা চাঁদ কেন কাঁদে নির্জন !

জলসায় তুমি যখন সাকি হও
আমি তখন হই ওমর খৈয়াম,
গালিবের কবিতার বিনিদ্র চোখে
আঁধারের মতো জমাট গাম !

তোমার মুকুলিত শরীর অদ্ভুত
যেন এক ছায়া চিহ্নের নির্যাস
আমি এক পরকীয়ার ফসিল
নিখোঁজ অরণ্যরোদনের বিলাস !

তারুণ্যের অধিবাসে শূন্য খেয়াল
আমি নই সুকান্ত কিংবা কীটস,
পরাজিত পাশার দানে অভিষেক
দ্রোহের কবিতারা জানায় কুর্নিশ।

তুমি শাহনামার আরব্য রজনী
আমি বেদুইন ঘুরি মরু প্রান্তর ;
মরু ক্যাকটাসের ঘ্রাণেই সন্তোষ
নয় বসরাই গোলাপের সওদাগর!

সহশ্র কাব্যের শতদলে তু মি পূজিত,
আমি নজরানা বিহীন উপসংহার !
রবির বিবর্ণ ছটা হতেও অযোগ্য
শুধু তোমার হাতেই সাচ্ছন্দ্য সংহার !!!

কাব্যঃ-৩
শিরোনামঃকালোয় কালো
কলমেঃ মৃদুল সাহা

কতবার তুমি আমায় বলেছিলে তুমি নাকি কালোয় কালো,
আমি শুধু বুঝেছি তুমি আমার হৃদয়ের আলোয় আলো।

যদিও আমার ভাগ্য হয়নি কখনো একটিবার তোমাকে দেখার,
নিঃস্ব মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তবু ছুঁতে চেয়েছি বারবার।

রংধনুর রং মেখে এঁকেছিলাম কত ছবি শিশিরের আয়নাতে,
ভেসে গেছে সেই ছবি নিজের অজান্তেই বিরান বেলার স্রোতে !

কৃষ্ণ কালো চোখ তোমার গভীর,ঘন আঁধার রাতের কাজল,
নক্ষত্রের আলোতে সমুদ্রের আঁধিয়ার,ঢেউ খেলা, ভরা নোনা জল।

সু-উন্নত বক্ষ যুগল আকাশে হাওয়ায় ভাসা ঘন মেঘের ভেলা,
মৃণাল কান্তি বাহুদ্বয়, ভোরের বাতাসে যেন সিক্ত কমল দোলা।

নব সৃষ্টির করুণায় তুমি সজল স্নেহে ফোটা অনাঘ্রাতা বনফুল,
শ্রাবণের জলে ভেজা পদ্ম পাপড়ি ঠোঁটে জোছনায় অতুল।

অসংখ্য নির্ঘুম রাত,শিয়েরে তুমি প্রদীপের জেগে থাকার সাধ,
অগম্য দিশায় পথা হারা নাবিক দরিয়ায়,মাস্তুলে একেলা চাঁদ !!

অন্তহীন দুর্গম যাত্রা পথে পিপাশায় তুমি মরু বুলবুলের গান,
নিশীথের শীতল হাওয়ায় ভাসা ক্লান্তির ঘুম মরিয়মের সুঘ্রাণ।

স্মৃতির মজলিশে তুমি ক্লিওপেট্রা, স্বপ্ন এক অচিন পৌরাণিক,
আলেক্সান্দ্রিয়ার বাতিঘর,দূর জলে ভেসে যাওয়া অসীম বন্ধন রৈখিক।

চোখের সব আলো শূন্য হলে আমি তোমায় দেখি হৃদয়ের আয়নায়,
কালো বা সুন্দর তুমি যেমনি হও,তুমি আছ চিরদিন মনের আলপনায়।।

 

কাব্যঃ-৪
শিরোনামেঃ জননী তুমি
কলমেঃমদুল সাহা

জননী আজও তুমি অন্ধ বিচারের কাঠগড়ায় !
কি ছিল বিধাতার মনে তোমার ভাগ্য লেখায় ?

কতকটা অনাদরেই বড় হও বৈষম্য স্পষ্টঃ
তথাকথিত সমাজ বলে এটা নাকি অদৃষ্ট !

প্রথম যৌবনে শত হাজার বহু বিধিনিষেধ !
কষ্টের পদযাত্রা শুরু জানা থাকে না কোথায় শেষ !

নিষ্পাপ স্বপ্ন গুলো বিসর্জন হলে শুকায় অশ্রু জল !
অচেনা হাতে সমর্পণ, বন্ধি পাখি শূন্য সম্বল !

কখনো লক্ষ্মী কখনো অলক্ষ্মী শত দেনমোহর !
নানা অজুহাতে তুমি শিখণ্ডী কত লোক লস্কর ।

অকাল বোধন ভাগ্য বরণ প্রেয়সী মরিচীকা !
আলেয়ার আলো যায় না ছোঁয়া নিয়তির পরিহাস কি লেখা !

মাতৃরূপে সেবিকা বিলিয়ে দাও অকাতর দান ।
পতিতা হয়ে খুইয়ে সর্বস্ব নিঃস্ব জোটে অপমান !

অচেনা জলসায় তুমি বিরহী সাকি, প্রদীপের জাগা রাত।
মাটির মতো সবংসহা আঁচলে ঢাকা সব দুঃখ আঘাত !

পীড়িতা তুমি ভিতরে বাহিরে অবনত অনুক্ষণ !
বঞ্চনা অবহেলার ইতিহাসে পরিযায়ী শ্রমিকের মতন !!

কখনো পালিতা কখনো আশ্রিতা আপন ঠিকানা নাই ! !
কখনো পিতার, কখনো স্বামী–সন্তানের, নিজের শুধু দীর্ঘশ্বাসটাই !!!!

 

কাব্যঃ-৫
শিরোনামঃএক মুঠো বৃষ্টি
কলমেঃ মৃদুল সাহা

আজ এক মুঠো বৃষ্টি
তোর ঠিকানায়
জানি না তুই এখন কি
করছিস কোথায় ?

জানিস কত কথা ভাবি
কত কি মনে পড়ে
জামপাতায় শ্রাবণ ধারা
ঝর ঝর ঝরে।

ছড়া কাটে তোর নামে
দূরে ভেজা দোয়েল
আনমনে গানের স্বরলিপি
ভোরের শিশির কোয়েল।

বলবি কি আমায় তোর
কি নামের শহর
আমার এখানে প্রতিদিন
এক বিষন্ন দুপুর।

জল ভরা মেঘনার কূলে
আমি আজও হাঁটি
একা এক ছায়ার মতো
পড়ে থাকে শূন্য পথটি।

ঢেউয়ের আঁচল জুড়ে
খেলে পানা ফুল
পিছনে যেন তুই দাঁড়িয়ে
করি শুধু ভুল !

সন্ধ্যার ফাগ রং যখন
ভিজে দীঘির জলে
দোল খায় কিছু টুকরো
স্মৃতি শূন্য বিরলে।

শুকতারার ভাঙ্গলে ঘুম
তোর নামেই ডাকি
আঁধারে একটি জুঁই রাতে
শুনি করে ডাকাডাকি।

মধ্য রাতে নির্জন নিরাল
মনমরা ক্লিষ্ট চাঁদ
কলমের কালিতে স্তব্ধ ব্যথা
কবিতায় বিষাদ।

কুবোর ডাকে প্রহর ঘুমায়
রাত বাড়ে একা একা
হৃদয়ের কথা বলি হাওয়ায়
ভালো থাকিস বিশাখা।

 

কবি পরিচিতিঃ-

কবি মৃদুল সাহা,

জন্ম ১৯৬২ সালের ১৩ এপ্রিল। চাঁদপুর জেলার, কচুয়া থানার অন্তর্গত তুলপাই গ্রাম। ৭ ভাই বোনের সংসারে, কবি চতুর্থ। তিন বোন চার ভাই। বড় ভাইকে ছোট্ট বেলায় কবি হারান। চরম দারিদ্র্যের সংসার,বাবা চাকুরী করতেন নারায়নগঞ্জে একটা ছোট্ট প্রতিষ্ঠানে। নাম মাত্র আয়ে অভাব নিত্য নৈমিত্তিক। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অবস্থা চরম হলে নারায়ণ গঞ্জে চলে আসেন। শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় ছোট্ট অন্ধকার ঘরেই সবার গাদাগাদি বাস। কবির পড়াশোনা কোন রকম চলে, সেখানে অভাবে ৭ম শ্রেনীতে পড়া কালীন সময়ে বকেয়া বেতনের জন্য স্কুল ছেড়ে দিতে হয়,পরে মামা বাড়ি হাজিগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত রামপুর গ্রামে ঠাই হয় কিন্তু বিধি বাম নানা পীড়নের মধ্যে ৯ম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হল আর থাকা হলো না। আবার নারায়ণ গঞ্জে চলে আসেন, এবং বহু কষ্টে সৃষ্টে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন। পরে অভাবের মাত্রা বেড়ে গেলে পড়াশোনা ছেড়ে বাঁচার তাগিদে কখনো ছাত্র পড়ানো, কখনো কাপড়ের দোকানে চাকুরী করেন এভাবে নানা কাজে ৭বছর পেরিয়ে যায়,কবি মনে পড়াশোনার কষ্ট রয়ে যায়। মনে মনে লেখা পড়ার সংকল্প রয়ে যায়, কিন্তু কর্ম জীবন শুরু সকাল থেকে রাত ১১ অব্দি চাকুরীর কারনে স্বপ্ন গুলো ভেঙে যায়,কিন্তু ইচ্ছে গুলো অটুট থাকায় তা পূরণ করতে কবি দৃঢ় সংকল্প নিয়ে অনেক রাত জেগে জেগে পড়াশোনা শুরু করেন। দিনে চাকরি,আর রাতে বাসায় ফিরে
পড়াশোনা এইভাবে তিন মাস পড়ে প্রাইভেট নিয়মে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন,পরে একই ভাবে বিএ পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হোন, আর কবির কয়েক জন বন্ধু থাকে কলেজের হাজিরা পূরণ করতে
সহায়তা করে। যা খুব স্বরণীয়। পরে আবার সংসারের বহু মুখী চাপে আর কিছু হয়নি। সবসময় কর্ম জীবনের অনিশ্চয়তা কবির জীবনে সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
বেকারত্ব জীবন কে কুরে কুরে খেয়েছে বহু সময়, বলতে গেলে অর্ধেক জীবন! বারবার কর্ম বদল হলে ও কবির ভাগ্য বদল হয়নি, এর মধ্যে কবি তার যৎসামান্য লেখা লেখি জীবন। কিন্তু জীবনের স্রোতে ভেসে গিয়ে যার কোন সুষ্ঠু পরিণতি লাভ করেনি।।

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি