লেখিকাঃ আয়েশা খন্দকার
সময়টা ৮৭ সালের ঘটনা।আমার বিয়ে হয়েছে তখন মাত্র দুমাস। বিয়ের দুমাস পর যখন আমি চিটাগাং থেকে বাড়ীতে আসলাম আমাকে দেখে বাবা খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলো। সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত অবদি কথা হচ্ছিল আমার সাথে। চিটাগাং আমার ভালো লেগেছে কিনা ওরা আমাকে ভালোবাসে কিনা
ওখানকার খাওয়া দাওয়া কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি।এক
ফাঁকে চিটাগাং এর লবনাক্ত পানির কথা আসল।বাবা
জানতে চাইলো মিঠা পানি কিভাবে পাই আমরা আমি বললাম টিউবওয়েল থেকে। এটা শুনে বাবাকে কিছুটা চিন্তিত দেখালো।তারপর বাবা বলল তোমাকে কল চেপে দেয় কে?? আমি বললাম কেন আমিই চাপি।এ কথা শুনে তাৎক্ষনিক আমার হাত দুটো নিয়ে দেখতে লাগল আমি কিছুটা অবাক হলাম বললাম বাবা কি দেখছেন আমার হাতে। দেখছি তোমার হাতে তো কোন দাগ পরেনি?? না বাবা কল চাপতে খুব সহজ কষ্ট হয় না আর পানিও খুব মজা।আমি আমার কথা বললেও
বাবার চিন্তা অন্য জায়গায়।
তারপর দুদিন বাবাকে অন্যমনস্ক দেখলাম।বাহিরে গেলে সময় মত ঘরে ফিরে না। আমি মনে মনে অভিমানে গাল ফুলে আছি।মাকে বললাম বাবা কি আমাকে এই দুমাসে ভুলে গেছে?? মা তুই আসবি দেখে তোর বাবা তোর পছন্দের সব জিনিস কিনে রেখেছে।
তবে আমিও বুঝতে পারছিনা তোর বাবার কি হয়েছে।
বাবা ঘরে আসার পর বাবাকে বললাম,আমি দুমাস পর
বাড়ীতে আসছি আমাকে দেখে আপনি খুশি হননি??
বাবা মুখে হাঁসি ছড়িয়ে দিয়ে বলে পাগলী মা’টা কি বলে!!! দুই মাস আমার পাগলী মায়ের মুখ না দেখে থাকার কষ্ট কিভাবে তোমাকে বুঝাই। তাহলে আসার পর আমাকে সময় দিচ্ছেন না কেন?? একটা কাজ ছিলো তাই, কাজটা হয়ে গেছে। এরপর পর বাবা মেয়ের কতশত গল্প কত খানা পিনা এই করতে করতে
কখন যে দুমাস হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।আসার আগের রাতে এক মহিলা এলো ১১/১২ বছরের একটি ছেলেকে নিয়ে।মহিলাটি আমার বাবাকে বলছিলো, মিয়া ভাই শুধু আপনার দিকে তাকিয়ে আমার ছেলেকে
আমার মেয়ের জন্য দিচ্ছি। অন্য কেউ হলে দিতাম না।
বাবা মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওনার ছেলেকে বলল,
এটা আমার মেয়ে ওর সাথে তুই চিটাগাং যাবি। তোর আপাকে
তুই কল চাপতে দিবিনা তোর আপার যেন কোন কষ্ট না হয়। বাবাকে বললাম ওকে কখন কোথা থেকে ঠিক করলেন?? তুমি আসার দুদিন পর। তাহলে আমি আসার পর ঠিক মত ঘরে না আসার কারণ এটা।
একজন বাবা তার সন্তানের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকলে সামান্য কল চাপা নিয়ে এত ব্যকুল হতে পারে। তা বুঝার সাধ্য কারো নেই। আমি স্বর্গ দেখেনি তবে আমি বাবার মাঝে আমি আমার স্বর্গ দেখেছি। দেখেছি অফুরন্ত ভালোবাসার ভান্ডার।বাবার জন্য আমি কিছু করতে পারিনি এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের। দোয়া করে আল্লাহর কাছে শুধু বলি “মহান দয়াময় আপনি আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউসদান করুন”। আমিন ছুম্মা আমিন।
অসাধারণ লেখা । ধন্যবাদ লেখকসহ প্রকাশক ছোট বোন জান্নাতকে।
অনবদ্য উপস্থাপনা