সবাইকে একুশে’র রক্তিম শুভেচ্ছা।
কখনো কখনো একটা মহৎ দিন নিয়ে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে তেমনই একটি দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার স্মৃতি-চিহ্ন হিসেবে এই দিনটি সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল জ্বলজ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের শত মহিমায় ভাস্বর এ দিন। এ দিনটি কেবল ইতিহাসের একটি বিবর্ণ তারিখ নয়, তা এমন একটি দিন যা আমাদের বাঙালি জাতীর ইতিহাসের ধারায় নিরন্তর প্রাণবন্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ। একুশ আমার গর্ব, একুশ আমার অহংকার।
বর্তমান প্রজন্মকে এই দিন সম্পর্কে জানানোর আহ্বান জানাই সকলকে। কয়জনই বা পারে ভাষার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে? এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করায় আমরা গর্বিত।
একুশের ফসল আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর অনন্য গান : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ এ গান আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে উজ্জীবনী মন্ত্রের প্রেরণা।
এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তায় যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, তা ছিল এক অবিনাশী বিস্ময়কর চেতনা। একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমার একপর্যায়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনগণের অস্তিত্ব ও ভাগ্যকে জুড়ে দেয়া হয়েছিল কৃত্রিম ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে। তদানীন্তন পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা ৭ জনের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১-র মধ্যে ক্রমে জোরালো হয়ে ওঠে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি। তা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল ইস্যু হয়ে ওঠে।
১৯৫২ সালের শুরুতে আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। ওই বছর একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না-জানা অনেকে। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সারা পূর্ব বাংলা। পরদিন সারারাত জেগে শহীদদের স্মরণে গড়া হয় শহীদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। এ শহীদ মিনার একুশের শোক, সংগ্রাম ও শপথের প্রতীক। তা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও জাতিচেতনামূলক আন্দোলনের চালিকাকেন্দ্র হয়ে আছে আমাদের জাতীয় জীবনে।
১৯৫২ সালের সেই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র। পরবর্তীকালে প্রতিটি গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সেদিন পূর্ব বাংলার অধিকার-বঞ্চিত মানুষের প্রথম সংগঠিত সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। পরবর্তীকালে প্রতিটি গণআন্দোলনের প্রেরণাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ওই আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সে সময়ে বাঙালির আত্মসচেতনতা ও আত্মপরিচয়ের যে উদ্বোধন ঘটেছিল তা-ই নানা আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রূপ নিয়েছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে।
রক্তিম শুভেচ্ছান্তে,
দৈনিক সপ্তস্বরা ওয়েব পত্রিকা &
কাব্য কথা – Literature Community. -কর্তৃপক্ষ।
Website : www.swaptasora.com
Email : swaptasora@gmail.com