ডেস্ক কোরেসপন্ডেন্টঃ জান্নাতুল ফেরদৌস
আগের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে দিয়ে ৬৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পেয়েছে সুইজারল্যান্ড। শুক্রবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষেও একই পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করবে সুইসরা। যদিও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে স্পেনের পক্ষেই।
ফ্রান্সের বিপক্ষে দল দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ ১০ মিনিটে দুই গোল করে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে।এখন সুইসদের সামনে স্পেনের কঠিন বাধা। গ্রুপ পর্বে ধীরগতিতে শুরু করার পরেও গত দুই ম্যাচে ১০ গোল করে স্প্যানিশরা রয়েছে অন্যরকম আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কিন্তু রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিততে হলে স্পেনকে গ্রুপ পর্বের ভুলগুলো অবশ্যই শোধরাতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য স্পেনের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ২২ বারের মোকাবেলায় স্প্যানিশরা মাত্র একবার পরাজিত হয়েছে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সুইসদের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ওই দলের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এবারের ইউরো স্কোয়াডে টিকে রয়েছেন অধিনায়ক সার্জিও বাসুকয়েটস। এছাড়াও ২০১২ ইউরো শিরোপাজয়ী দলের দুই খেলোয়াড় হিসেবে বাসকুয়েটসের সাথে আরো রয়েছেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার জোর্দি আলবা।
ইতালিকে ফাইনালে ৪-০ গোলে পরাজিত করে পরপর দ্বিতীয়বারের মতো ২০১২ আসরের ইউরোপিয়ান শিরোপা পাবার পর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়টি ছিল নক আউট পর্বে স্পেনের প্রথম জয়। স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সাইমন বলেছেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালের সাফল্য আমাদের ওপর নির্ভর করছে, প্রতিপক্ষের ওপর নয়। প্রতিপক্ষ ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড না ইউক্রেন সেটা কোনো বিষয় নয়। আমরা এখানে এসেছি নিজেদের সেরাটা দিতে এবং সেরা দলগুলোকে পরাজিত করতে।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটি ছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সুইজারল্যান্ডের প্রথম জয়। সর্বশেষ ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড বড় কোনো টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। কিন্তু শেষ আটের ওই ম্যাচে অস্ট্রিয়ার কাছে ৭-৫ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই কোনো ম্যাচের সর্বোচ্চ গোল। প্রায় অর্ধশতক পাড়ি দিয়ে সুইজারল্যান্ড এখন প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া কোচ পেটকোভিচের অধীনে দারুণ এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্পেনের মোকাবেলা করতে নামছে সুইসরা।
বেলজিয়াম বনাম ইতালি,
এবার আসল পরীক্ষার সামনে ইতালিয়ানরা
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালি উড়ছে। টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে তারা পেছনে ফেলেছে নিজেদের ৮৩ বছর আগের রেকর্ড। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পর্তুগালের কাছে হারের পর ‘পরাজয়’ যেন ভুলেই গেছে তারা। কিন্তু এত কিছুর পরও এ রেকর্ড সন্দেহবাতিক ফুটবলপ্রেমীদের পুরোপুরি নিশ্চিত হতে দিচ্ছে না যে, ইউরোতে তারাই সেরা দল। কারণ তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, ওয়েলস আর অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা ইতালির যে সত্যিকারের পরীক্ষাই হয়নি। তবে শেষ আটে এসে ‘কঠিন’ পরীক্ষাই দিতে হবে আজ্জুরিদের। তাঁদের সামনে যে রোমেলু লুকাকুদের বেলজিয়াম!
যে দলে লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইনা, এডেন হ্যাজার্ড, টোবি অল্ডারভাইরেল্ড, ইয়ানিক ফেইরা-কারাসকো, থরগান হ্যাজার্ড, এক্সেল উইতসেল, দ্রিস মের্তেন্সদের মতো ফুটবলার আছেন, তাঁরা ইতালির কঠিন পরীক্ষা তো নেবেনই। ফিফা তালিকায় বিশ্বের এক নম্বর দল বেলজিয়াম। শুক্রবার সে কারণে ফুটবলপ্রিয়দের জন্য দারুণ একটা রাতই অপেক্ষা করে আছে।
তবে প্রতিপক্ষের ব্যাপারে ইতালিয়ানদের ভাবনা খুবই পরিষ্কার—ইউরোর শিরোপা জিততে হলে বড় প্রতিপক্ষ, কঠিন প্রতিপক্ষ, সবাইকে হারিয়েই জিততে হবে, ‘এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যত ওপরের দিকে যাবেন, প্রতিপক্ষ তত কঠিন হবে। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়াম-পরীক্ষা আমাদের সামনে, এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, আমাদের কাজটা একই।