কলমেঃ তপন বিশ্বাস
প্রতিবার ঢাকায় গিয়ে
নিউমার্কেট হতে
একগোছা রজনীগন্ধা কিনে
আমি সোজা চলে যাই
মাহ্ফুজার কবরের পাশে।
রজনীগন্ধার গোছাখানি
কবরের পরে রেখে
চুপচাপ দাড়িয়ে থাকি
মিনিট দশেক ধরে।
তারপর
যথারীতি চলে আসি
ম্লান মুখে
অশ্রু গোপন করে।
সেদিন আমি এমনি ভাবে
কবরস্থান হতে
আসিতেছি ফিরে।
ওমনি কোথা হতে
এক মৌলবীসাব
ডাকিল আমারে।
আমি হিন্দু বলে
এদিক ওদিক চেয়ে
বলিল চুপিসারে
মাহ্ফুজার কবরের পাশে
তোমায় দেখি
অনেক দিন পরে পরে।
বলোনা কিসের তরে
হেথায় আস বারেবারে ?
আমি কোন কথা না বলে
তার পানে
চাহিলাম বিষ্ময়ে।
বলিলাম, কিছুটা ত্রস্থ হয়ে
জানিনা কেন কিসের টানে
আমি হেথায় আসি বরেবারে।
ওমনি আমার হাতখানা ধরে
মৌলবী বলিল নাছোড়বান্দা হয়ে
প্লিজ, বলোনা আমারে
কেন আস হেথায় বারেবারে ?
মৌলবীর মুখখানা দেখে
কেন জানিনা
বন্ধু ভাবিলাম তারে
তাই বলিলাম ভালবেসে
আমার কবি সত্ত্বা রেখে
এক অনাহুত আত্মীয়র বেশে।
বলিলাম স্ববিনয়ে
প্রায় বছর তিনেক আগে
মাঝে মাঝে কথা হত ফোনে।
তেমন কোন কথা না
কেবলি কেমন আছ
জাস্ট এইটুকু বলা।
কোনদিন কোন ভাবে
স্বচোক্ষে দেখিনি তারে
শুধু তার কবিতা পড়ে পড়ে
আমি বুঝেছিলাম
কোথায় যেন তার মাঝে
এক অপ্রকাশ্য প্রেম লুকিয়ে আছে।
সেই থেকে
ভেবেছিলাম মনে মনে
আগামীবার ঢাকায় গিয়ে
বন্ধু আশরাফুলকে সাথে নিয়ে
মাহ্ফুজার কাছে যাব
ছোটখাটো
একখানি উপহারও দেব।
কিন্তু সেসব কিছুই হলোনা
শুনিলাম এক কবিবন্ধুর কাছে
দু,মাস হলো
মাহ্ফুজা মারা গেছে।
শুনিয়া তাহার কথা
মনে লাগিল ভীষণ ব্যাথা।
সেই হতে যখনি ঢাকায় আসি
তখনি এক অজানা তাগিদে
হেথায় এসে
কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকি।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেবল বলি
মাহ্ফুজাকে ভালবেসে
তুমি একটু বলোনা কথা
কবর হতে উঠে এসে।
মৌলবী শুনিয়া আমার কথা
যেন হলো দিশাহারা।
বলিল চোখের জল ফেলে
বাবু, তোমার কথায়
এ অন্তরখানি গেল গলে।
কবি পরিচিতিঃ-
নামঃ তপন বিশ্বাস
পূর্ব পাকিস্থান তথা অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রূপরামপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করলেও তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন আধুনিক কবি, লেখক ও কলামিষ্ট হিসাবে খ্যাত। তিনি উত্তর পূর্ব ভারত সাহিত্যসভার কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য। এছাড়াও লক্ষভেদ পত্রিকার উপদেষ্টা ও কোলকাতা ভিউজের চিপ এডিটর সহ দুই বাংলার আলো পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক। ঋতম, বুলবুল, আনন্দ মুখোর সাহিত্য পত্রিকা, ইসামন, জলঙ্গী, নিশান,বর্ণমালা, ডাহুক সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা নিয়োমিত প্রকাশিত হয়।
অনেক আলোয় ভরা (কবিতা সংকলন) তুমি এলে আলো দিলে (কাব্যগ্রন্থ) যে প্রেম ভূলার নয়, এখনো জল জমে আছে (অপ্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ) অনন্য জীবনের সন্ধানে (সম্পাদনা) রূপাঞ্জনা (উপন্যাস) তমা (অপ্রকাশিত উপন্যাস) অশনি সংকেত (নাটক) উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় স্মৃতি স্মারক সম্মান ও অসমের কৃষ্টি এ্যাওয়ার্ড – হেমাঙ্গ বিশ্বাস স্মৃতি স্মারক সম্মান প্রদান করা হয়। এছাড়াও মানবধর্ম প্রতিষ্ঠায় আত্মোনিয়োগ ও ব্রত গ্রহন নির্ভিক ও নিরপেক্ষ চিন্তাশীল,মননশীল, সাহিত্য আন্দোলনের একজন অগ্রদূত হিসাবে – সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন সম্মান, ফটোনস্ মিডিয়া প্রোডাকসান্ সাহিত্য সম্মান, বুলবুল সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয়।