1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
শিরোনামঃতন্দ্রায় হঠাৎ দেখা। - দৈনিক সপ্তস্বরা
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৬ অপরাহ্ন

শিরোনামঃতন্দ্রায় হঠাৎ দেখা।

Jannatul Abodhi
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

কলমেঃ পার্থ প্রতিম গুহ নিয়োগী।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত প্রান্তে একটি ছোট্ট স্টেশন।একটুখানির জন্যে ট্রেন টা ধরতে পারলাম না।উনিশ– কুড়ি বছর বয়স হলে এক ছুটে ট্রেন টা ধরে নিতাম কিন্তু,এই আটাশ বছরে আর ছুটতে ইচ্ছে করে না। বাধ্য হয়ে প্লাটফর্মের একটা বেঞ্চের উপর এসে বসলাম। স্নাতক স্তরের পরীক্ষা পাস করার পরে বহুদিন কর্মহীন ছিলাম। এখন স্টেশন থেকে কিছু দুরে একটা প্রাইমারী স্কুলে পড়াই আমি,তাই এই স্টেশন খুব প্রিয় আমার। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেল,দখিনের শির শির করা বাতাস ঘর্মাক্ত মুখে যেন বরফের কুচি ছড়িয়ে দিচ্ছে। সামনেই একটি চায়ের দোকান, ভাবলাম একটু চা খাই – সময়টাও কিছুটা কাটবে।চা খেতে খেতে দূরের কালো গাছ গাছলায় ভরা বন টাকে দেখছি।হঠাৎ একটি মেয়ের গলা— ‘এই প্রিয় ‘।
চমকে উঠলাম। আমার নাম ধরে কে ডাকল! পাশের বেঞ্চের দিকে তাকালাম,উনিশ – কুড়ি বছরের দুটি ছেলে মেয়ে বসে বেশ গল্প করছে। মেয়েটি বলল— ‘প্রিয়, কাল কিন্তু সিনেমা দেখতে যাব।’
বুঝলাম,ঐ ছেলেটির নাম ও প্রিয়। আমার মনটার কেমন ইচ্ছে করল সাত বছর আগে ফিরে যেতে।…..প্রিয়া শহুরে স্মার্ট মেয়ে। পড়াশুনা সূত্রে পরিচয়,বন্ধুত্ব,তারপর প্রেমে পড়া।খুব ভালবেসে ফেলেছিলাম,কিন্তু বলার সাহস হয়নি। বুঝতে পারতাম, ও আমাকে ভালবাসে– কিন্তু ওটা বন্ধুত্ব না ভালবাসা আজও আমি বুঝিনি।ওরা আর্থিক দিক থেকে অনেক ধনী ছিল।তার উপর আমার বেকারত্ব,তাই অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কখন মুখ ফুটে ভালবাসার কথা বলা হয়নি।
তারপর হঠাৎ চাকরী পেয়ে চলে এলাম এই প্রত্যন্ত গ্রামে।ফিরে গিয়ে আর খুঁজে পায়নি,বাড়ি পালটে ফেলেছিল ওরা। কোনো ঠিকানা ও রেখে যায়নি। একরাশ কষ্ট নিয়ে ফিরে এসেছিলাম সেদিন।প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই উঠে পড়লাম।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজ আর সিটে গিয়ে বসতে ভাল লাগল না,মনটা বড় অশান্ত লাগছিল। তাই দরজার কাছে দাড়িয়ে রইলাম।
হঠাৎ পেছন দিক থেকে,একটা মেয়ে কন্ঠের আওয়াজ – প্রিয়, এদিকে এস।
চমকে উঠে, পিছনে তাকালাম।– না,সেই ছেলে মেয়ে দুজন কে দেখলাম না।তবে কে ডাকল? মন টা খারাপ হয়ে গেল,ভিতরে এসে সিটে বসে পড়লাম। চোখ টা সামনের সিটে যেতেই, আমার বুকের ভিতর টা ধড়াস করে উঠল।– সাথী! মাথায় লাল সিঁদুর, পরনে শাড়ি..একদম পালটে গেছে। বললাম– ‘সাথী, চিনতে পারছ?’
‘আরে, প্রিয়, তুমি! অনেক পালটে গেছো..চিনতেই পারিনি।অনেকদিন পর দেখা হলে যা হয়। কেমন আছ?’ উত্তরে বললাম – ‘চলে যাচ্ছে এই আর কি?’
এরপর একটা বাচ্চা ছেলে এসে তার কোলে বসল। আমি বললাম– ‘তোমার ছেলে?’
‘হ্যাঁ…।’
ছেলেটিকে কাছে টেনে নিলাম। ‘একদম তোমার মতো দেখতে হয়েছে,সাথী’। জিজ্ঞেস করলাম– ‘কি নাম তোমার?’
ছেলেটি বলল– ‘প্রিয়তোষ সেন।’
আরও জোরে ধাক্কা খেলাম আমি। মুখ তুলে চাইলাম সাথীর দিকে। সে একদৃষ্টে বাইরে তাকিয়ে আছে। ট্রেনের সেই হাল্কা আলোয় পরিষ্কার দেখতে পেলাম তার চোখ দুটি জলে ভরে উঠেছে। আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। ট্রেনের গতি কমে এসেছে,প্লাটফর্ম ঢুকছে । সাথী উঠে দাঁড়াল আর বলল– ‘প্রিয় , আমাকে এবার নামতে হবে।’ একটু এগিয়ে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল , ‘ আমাদের যেদিন ছিল, সে কি গেছে একেবারে?’ মাথা নীচু করে করুণ স্বরে বললাম ‘ রাতের তারারা সব আছে দিনের আলোর গভীরে।’
ট্রেন থামতেই সাথী নেমে গেল। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না,ছুটে গেলাম দরজার কাছে। এখনো দেখতে পাচ্ছি,ট্রেন গতি নিয়েছে– আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে একটা প্রেম কাহিনী ।

হঠাৎ একটা জোর ঝাঁকুনিতে ক্লান্ত চোখের তন্দ্রা কেটে গেল, আবার বাস্তবে ফিরে এলাম।
বিষন্ন মনে দরজার রড ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। শুধু চোখ থেকে চশমা টা খুলতেই একফোঁটা জল ট্রেন লাইনের কালো পাথরে মিশে গেল।

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

One thought on "শিরোনামঃতন্দ্রায় হঠাৎ দেখা।"

  1. Sk Siam says:

    ভীষণ ভালো লাগলো পাঠে

    এটাই বাস্তবিক যে ধরণীর আসল রূপ মধ্যবৃক্ত ফ্যামিলিই বুঝতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি