কলমেঃ হারুন – উর -রসিদ
সদ্য অবসরে যাওয়া হাসিব চৌধূরী, শহরের কোলাহল ছেড়ে গ্রামে বসতি গাড়লেন।ছোট বাংলো বাড়ী।আশপাশ বৃক্ষরাজীতে ভরপুর।শীতের আজকের সকালটা অন্যদিনের মত নয়। সকালে একপশলা বৃষ্টি হওয়াতে ঝকঝকে নীলাকাশ।শীতটাও একটু বেশী।তাই এই মধ্যাহ্নেও চাদর গায়ে বসে আছেন আরাম চেয়ারে বাড়ীর উঠানে।সাথে তার প্রিয় রেডিওটা।রেডিওর নব ঘুরাতে ঘুরাতে, এক জায়গায় স্হির হয়ে গেল।
আকাশ বানী কোলকাতা। শুরু হচ্ছে আমাদের হারানো দিনের গান।আজকের প্রথম শিল্পি প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়, আর গানটি হলো,সাতটি তারার এই তিমির”।গানটি শুনতে শুনতে হাসিব সাহের তলিয়ে যান স্মৃতির অতল তলে।এই গানটির সাথে একজন নাচ করতেন।তিনি নুরজাহান।দিনাজপুর জি টি স্কুল।কিশোর বেলার সহপাঠী। সেই শৈশব,ভাললাগা।স্কুল গেটে একজন আরেকজনের জন্য দাড়িয়ে থাকা। ছুটির পর একসাথে বাড়ী ফেরা। এমন করে সকাল দুপুর গড়িয়ে আজ সায়াহ্ন! সেই দিনটির কথা আজো ভুলেনি হাসিব।সবে মাত্র কৈশোর পেরিয়েছে। নির্জন দুপুর। গাছের ডালে ঘুঘু পাখি ডেকে চলছে একমনে।তারি মাঝে বসে আছে চুপচাপ সদ্য যৌবনে পা দেওয়া দুজন যুবক যুবতী। রাত পোহালেই হাসিবরা চলে যাবেন বাবার নতুন কর্মস্হলে।আয়োজন চলছে বাঁধা ছাদার।মাথা নীচু করে বসে আছে দু জন।চোখ ভিজে উঠছে জলে।
তোমার সাথে কি আর দেখা হবে না!
নিরুত্তর হাসিব।কি জবাব দিবে। এর জবাব তো তো তার জানা নেই।চলে যাচ্ছি এটুকুই শধু জানি! ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে। নতুন শহরে নতুন স্কুলে।
সারা রাত বিনিদ্রই কাটলো হাসিবের।ভোর না হতেই, নুরজাহানদের বাড়ীর দরজায় কড়া নাড়তে গিয়েও থেমে গেল।আজ আর যেন সেই অধিকার টুকু নেই।গাড়ীর আওয়াজ শুনে বাসায় ফিরে এলেন।সব প্রস্তুত।শহরটাও পর হয়ে যাবে।জীপ চলছে।দুরে দাড়ায়ে নুরজাহান।হাসিব বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে।গাড়ীটা মোড়ে বাক নিতেই সব অতীত হয়ে গেল।জীবনের নতুন পথ চলা শুরু হলো।জীবনের বাঁকে বাঁকে এমনি কত না পাওয়া গল্প, কত দীর্ঘশ্বাস!