কলমেঃআই জামান চমক
আন্ধা প্রহর শেষ হয়ে ভোরের অপেক্ষায়
কুয়াশাভেজা ঘাসের শিশির সেজেগুজে তৈরী
রুপের ঝলকানীতে সূর্যকে পোড়াবে বলে
ফজরের সিজদার বিনিময়ে পাপীকে ক্ষমা করতে
দয়ার ডালি নিয়ে রয়েছেন আল্লাহ্
ভগবান গড এলি অপেক্ষায় আছেন ধার্মিকের প্রার্থনার
পত্রিকা ভাঁজ করতে ব্যস্ত হকার,
আলো ফুটলেই ছুটবে বিলি করতে
পেটনীতির মন্ত্রীপাড়া-ফুটপাতে মাথার নিচ থেকে
ইটের বালিশ সরাচ্ছে পথশিশু
অবহেলার জায়নামায কাধে করে সে এখনই ছুটবে
পেটপূঁজার উপচার যোগাতে।
হাস্নাহেনার ঘ্রান ফুড়িয়ে যাওয়ায়
ডানা ঝাপটে এই মাত্র ডেকে উঠল বিরহী বিহঙ্গ
শহরজুড়ে রাতের পাহারাদাররা
হাই তুলছে আর বারবার ঘড়ি দেখছে
ঘরে ফেরার সময় হতে আর কত বাকি?
হৃজ্জমের নোটিফিকেশ জানাচ্ছে,
চেনা ঘরে ফিরে গেছ তুমি
স্নেহের শানবাঁধানো ঘাটে বসে
মুখে ছিটাচ্ছো দীঘির জল
আজন্ম শৈশবমাখা জীর্ন উঠানে বসে
বাঁশের কুলায় ঝাড়ছো ভালোবাসা
চাল-ডালে মিশে থাকা লোভ-ছলণার পাষানকণা
আলাদা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা তোমার
নির্ঘুমে রাতভর অঙ্ক কষলাম
হিসাব মিলল না তোমার আগমন প্রস্থান যোগ বিয়োগের
এলে কেন আর গেলে কেন-
সে উত্তরও দেয়নি গোটা রাতের স্বাক্ষী হুতোম পেঁচা
ব্যর্থতা মেনে নিশ্চুপই ছিল নিশিকন্যা নক্ষত্ররা
অথচ জেলখানার দেয়ালেই লিখা আছে আদিকথা-
‘চলে গেলে আর ফেরত আসে না, আসবে বলে তো যায় না’
বরং কচি সজনে ডালের মত ভঙ্গুরধর্মী হয়েও দৃঢ় থাকে
যেমন থাকে ক্ষমতার গদিতে একবসায় স্বৈরশাসক।
নদীর স্রোত ভাটিতে গেলে উজানে আর চলে না
মনে রাখে না পর্বতমালার প্রণয়।
আবার এটাও হতে পারে যে,
জেদই তোমার প্রিয় অলংকার।
প্রতিদ্বন্দিতাই তোমার প্রেম
চিরস্থায়ী প্রতিযোগীতাই তোমার কাছে সংসারের মানে!
অথচ দ্যাখো, তোমার অপেক্ষায়
দৃষ্টি মেলে রেখেছি
চোখের দুই পাপড়িকে
বানিয়েছি সমান্তরাল রেললাইন
উন্মুক্ত নয়ন মিছেই দেখে তোমার ছায়া
তোমাকে ভালোবাসতেই ভালোবাসে এ বঞ্চিত হৃদয়
অলস কুমারের অলীক কল্পনাতেই উন্মাদ আমি
‘তুমি নামের খেজুর কাঁটায়’
বেহায়া মনের অযৌক্তিক যুক্তিতে
অপুষ্টিতে ভোগে নবজাতক আশা।
অপেক্ষা করি নদীর
অপেক্ষা করি হারানো স্রোতের
বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা হোলো-
নদীর স্রোতে চলে যাওয়া জল ফিরে আসবে।
ফিরে আসবে।
ফিরে আসবে বাষ্প হয়ে
কুয়াশা হয়ে
বৃষ্টি হয়ে
শিশির বিন্দু হয়ে
ঘাম হয়ে
রক্ত হয়ে
অথবা, আমার ব্যাথার অশ্রু হয়ে ফিরে আসবে।
অবাধ্য মায়া’র ব্যখ্যা হোলো-
মাঝপথে হাত ছেড়ে
চলে গেছে যে প্রেয়সী
তার সুখ সন্ধানী মনও ঘুরে ফিরে
আমার কাছেই আসবে
স্রোত বয়ে যায় পূনর্বার ফিরতে
তুমিও গিয়েছ ফিরবে বলে।
সামনা সামনি বসে অপলক দৃষ্টি ছড়িয়ে
দুজনার চোখ থেকে-দুজনার অমৃতের সুধা পান করা হবে না
একই আয়নায় যুগল আঁখির ছবি আর ভাসবে না
একসাথে দেখতে যাওয়া হবে না শাপলা বিল
কবিতার বদ নেশাও কেটে যাবে দুজনার
-আমার আবৃত্তি করার,
তোমার শোনার
‘তুমি মানেই আমি
আমি মানেই তুমি’
এমন জায়েজ মিথ্যা
আমাদের আর বলা হবে না।
অথবা
আমাদের আর কোনো দিন দেখাই হবে না।
কিন্ত
বাহুডোরে আবার এসে মিলবে আমাদের ভালবাসা
তোমার অভিমানের গোপন কান্না
বাষ্প হয়ে ফিরে আসবে আমার কাছে
তুমি বারবার যতই দুরে সরে সরে যাবে,
মেঘ থেকে মেঘের আড়ালে হারাবে
ততই ‘তুমি’ থেকে ‘তোমার’ সব
ফিরে ফিরে আসবে আমার বিদ্রোহী বন্দরে।
হয়তো প্রজাপতির উড়ে যাওয়া পাখায়
ফিরে আসবে তোমার চঞ্চলতা
ময়নার মুখস্ত বুলিতে শোনা যাবে
তোমার ভেঙ্গে ফেলা ওয়াদার বাণী।
ষড়ঋতুর লেজ ধরে ফিরে আসব
তোমার বদলে যাওয়া স্বভাব
চৈত্রের খরায় মরীচিকার সাথেই
আসবে তোমার প্রেম।
ভুবনমোহিনী হাসি ফিরে আসবে
স্বল্পায়ু গোলাপের মাতাল করা সৌন্দর্য-সৌরভে।
চিরতরে ছাড়াছাড়ি তোমার সাথে
ভাটির থেকেও ভাটিতে
দুরের স্রোতেই যেও তুমি
ফিরে আসুক আমার আর আমাদের ভালবাসা
ভালোবাসা আসুক মাছের পিঠে
ভালোবাসা আসুক মাছরাঙ্গার ঠোটে
ভালোবাসা আসুক পরিশ্রমী ঘামের ফোটায়
ভালোবাসা আসুক অচেনা দেয়ায়
ভালোবাসা আসুক প্রতিবাদের স্লোগানে
আসুক প্রতিবাদীর ঝড়া রক্তে।
ভালোবাসা আসুক বর্ণমালার মিলে
ভালোবাসা আসুক শাপলা ফুলে
ভালোবাসা আসুক ধানের পাতায়
আসুক ডিঙ্গা নৌকায়
ভালোবাসা আসুক বেলায় অবেলায়
আসুক সীমাহিন সীমানায়
ভালোবাসা আসুক শীতের সকালে
আসুক রশের চুমুকে
ভালোবাসা আসুক চাদরের ভাঁজে
আসুক বস্ত্রহীনের কাঁপনে
ভালোবাসা আসুক উড়ে যাওয়া ঘুড়িতে
ভালোবাসা আসুক কাঁচের চুড়িতে
ভালোবাসা আসুক রমণীর খোপাতে
ভালোবাসা আসুক আকাঙ্খিত বাহুতে।
ভালোবাসা আসুক ঝড় হয়ে
ভালোবাসা আসুক বৃষ্টি হয়ে
ভালবাসা আসুক নদী হয়ে
আসুক নারীতে
আসুক অপেক্ষায়।
অথবা
ভালোবাসা আসুক অন্য কোনো ভাবে
অন্য কোনো রুপে।