ডঃ সুজাতা ঘোষ
যুগ যুগান্ত ধরে ঘুমিয়ে আছি দুই বাহু বিস্তৃত করে।
কাউকে বিরক্ত করি না, কাউকে কাছে টানি না, কারো কাছে যাইও না;
অথচ মানুষগুলো মাঝেমধ্যে আমার কোলে এসে পড়ে।
আচ্ছা, একটুও কি শান্তিতে থাকবার উপায় নেই!
এই যে আমি গোল গোল করে ঘুরি
আমার মাথার উপর বিশাল মেঘের আচ্ছাদন
থরে থরে ঢেউগুলো কেঁপে ওঠে;
মানুষের যদি ভয় হয়, তবে আসে কেন এখানে?
যেতেই পারে পাশ কাটিয়ে।
অতি সামান্য পরিধি নিয়েই তো আমার বিস্তৃতি;
বারমুডা থেকে ফ্লোরিডা, ফ্লোরিডা থেকে পারটো রিকো,
আবার পারটো রিকো থেকে বারমুডা।
এই বিশাল পৃথিবীতে মাত্র এইটুকুই তো আমার,
তাতেও মানুষের আপত্তি!
আমার থেকেও তো মানুষগুলো বেশী ভয়ঙ্কর,
কিছু জানলই না আমার সম্বন্ধে, অথচ
কত নামই দিয়ে দিল।
কেন রে বাবা, আমি কি নিজে থেকে কখনও
গেছি তোদের গোলাপ বাগানের বেড়া ডিঙিয়ে?
তোরাই তো পাঁচ দশক ধরে আমাকে জ্বালিয়ে মারলি।
হাসিও পায়,
কত ব্যখ্যা;
“ মিথেন গ্যাস ”,
“ সারগেসো সি ”,
“ ইলেকট্রনিক ফগ ”।
মানুষগুলোকে দেখে মায়া হয় আমার,
এত জানার ইচ্ছা! ওফ।
যদি সত্যিই জানতে চাস, আসতে হবে আমার সামনে।
টেনে নেব আমি ভিতরে।
সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার গভীর কোলে,
ওরা এখন প্রলাপ বকে।
আমি অনেক দয়াবান
সবাই বেঁচে আছে এত যুগ পরেও।
তোদের ওখানে তো মানুষের কয়েক বছর পরেই
শ্বাসটা কর্পূরের মত উবে যায়।
আমার এখানে, আমার ইচ্ছার বাইরে মরতেও পারে না ওরা।
আসবি নাকি ক্যারিবিয়ান সমুদ্র ভেসে?
চলে আয়, আমি এখনও ঘুরছি বৃত্তাকারে।
আমার এই বিস্তৃত রাজত্বে কারোর মৃত্যু নেই, জন্ম নেই।
তারা শুধু ঘোরে বৃত্তাকারে, মুদিত চোখে।
আমার জলচ্ছাসকে লোকে ডেভিল বলে ভয়ে।
একবার ভয় না পেয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে অনুভব কর তো;
দেখ আমি কত ভয়ঙ্কর সুন্দর।
আমার রুপ শুধু জলেই সীমাবদ্ধ নয়,
আকাশে ঘিরে আছে ঘন মেঘ, ওখানেই তো
মেলে দিয়েছি আমার সুপ্ত ইচ্ছার বসন।
যা আকৃষ্ট করে মানুষকে।
টেনে আনে আমার গভীরে।
আমি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেই শরীরের প্রতিটি কোনায়।
আর মানুষ, তারা অবশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ভালোলাগায়।
আমি আদি অনন্ত কাল শুয়ে আছি নিজেকে মেলে।
ভালো না বেসে পারবেই না আমার গর্জন।
ভালো বাসতেই হবে আমার মেঘের মুকুট।
ভালো লাগবেই আমার পেশীবহুল বাহু যুগল,
যখন ওলট পালট করবো তোমায় হাসতে হাসতে।
ওই যে কিসের শব্দ আসে ভেসে?
বোধ হয় কেউ আসছে পথ ভুলে,
বহুযুগ পর আবার,
আবার আমি ভীষণ খুশি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভীষণ খুশি আমি।
আনন্দে তাণ্ডব শুরু করেছে আমার নিম্নাঙ্গ,
আকাশে উড়ছে কালো কুন্তল রাশি,
মেঘ হয়ে শরীরটা ঢেউ তুলে থর থর কাঁপছে,
হা – হা – হা – হা – হা – হা।
শান্তি – শান্তি – শান্তি।।