1. fancy615439@gmail.com : Jannatul Ferdous Abodhi : Jannatul Ferdous Abodhi
  2. ahmedsuman307@gmail.com : Ahmed Suman : Ahmed Suman
  3. rakibowasim@gmail.com : Rakib-Ul Islam : Rakib-Ul Islam
সাঁঝবাতির রূপকথা - অর্পিতা বোস।দৈনিক সপ্তস্বরা। - দৈনিক সপ্তস্বরা
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

সাঁঝবাতির রূপকথা – অর্পিতা বোস।দৈনিক সপ্তস্বরা।

জান্নাতুল ফেরদৌস অবধি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২

সাঁঝবাতির রূপকথা

অর্পিতা বোস

১)

রূপকথার গল্পের মতো সুন্দর চারদিক। রূপকথার গল্পের মতোই আবহ। ফলের রসে মেশানো সোনালী তরলের গ্লাসে আবার ঠোঁট ছোঁয়ায় সাঁঝবাতি। মাথা-শরীর ঝিমঝিম করা এক দ্রিম-দ্রিম অনুভূতি। ভালো লাগছে। আগেও কয়েকবার খেয়েছে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। তবে আজ প্রথমবার এত ভালো লাগছে। রুফটপ রেস্তোরাঁয় এই প্রথম আসা সাঁঝবাতির। পিজির রুমমেট মোহিনীর জন্মদিন। সবার সামনে নেশার গ্লাসে চুমুক দিতে শুরুতে একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। আসলে মফস্বলের মেয়ে তো। এসব আধুনিক শহুরে স্রোতে গা ভাসাতে একটু ইতস্তত বোধ হয়ই। কিন্তু কোন প্রতিরোধই আজ বোধহয় তেমন যথেষ্ট ছিল না। শুধু কি মোহিনীর অনুরোধ? নাহ্। ঠিক উল্টোদিকে বসে থাকা দুটো চোখের নীরব অনুরোধকেও বোধহয় উপেক্ষা করতে পারেনি সাঁঝবাতি। মোহিনীর বয়ফ্রেন্ডের বন্ধু সৌম্যদীপ। আধুনিক সময়ে এতবড় নাম উচ্চারণ হয়না। সবকিছুই শর্টে। সাঁঝবাতি যেমন এখন ‘বাতি’ তেমনই সৌম্যদীপ শুধুই ‘দীপ’। বয়ফ্রেন্ড শব্দটা মনে পড়তেই আপনমনে হেসে ওঠে সাঁঝবাতি। শহরে আসার আগে বয়ফ্রেন্ড আর প্রেমিকের পার্থক্য জানতই না। এখানে এসেই ফিয়ান্সে, উড-বি এসব শব্দদের সাথে পরিচয়। তবে আজ মোহনার বয়ফ্রেন্ড হয়তো প্রোপোজ করবে মোহনাকে। তারপরই বদলে যাবে সম্বোধন। বয়ফ্রেন্ড থেকে..

আচ্ছা সুবিনয়দা কি সাঁঝবাতির বয়ফ্রেন্ড? নাকি উড-বি? নাকি ফিয়ান্সে। নাক কুঁচকায় সাঁঝবাতি। নাহ!এইসব আধুনিক শব্দ কিছুতেই সুবিনয়দার সাথে যায়না। মোটা ফ্রেম আঁটা, সাইকেল চড়া, ঘেমো গন্ধের স্কুলমাস্টার সুবিনয়দাকে আজকাল বড্ডো গ্রাম্য লাগে। এড়িয়ে চলে এখন সাঁঝবাতি। কতদিন হয়ে গেছে কোন যোগাযোগই রাখেনি। যোগাযোগ রাখেনি মানে সুবিনয়দার বেশীরভাগ মেসেজগুলোও খুলে দেখেনি। এক আধটা খুললেও ভালো করে পড়েও দেখেনি। সপ্তাহে এক আধদিন হয়তো দায়সারাভাবে খুব ফর্মাল আর শর্ট উত্তর দিয়েছে। বড্ডো ব্যাকডেটেড কথা বলে খালি। সবসময়ই টিচারগিরি। আগে মফস্বলে থাকতে মানতো সুবিনয়দার সব কথা। কিন্তু এখানে আসার পর ভালো লাগেনা। কেন ভালো লাগবে? এখন সাঁঝবাতি এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী। এখনও কি সুবিনয়দার সেই ছাত্রী নাকি! যে সারাক্ষণ জ্ঞান দেবে! অসহ্য লাগে এসব। তাই মেসেজ সিনই করেনা। আগে সুবিনয়দা ফোন করত খুব। ফোনে দুটো রোমান্টিক কথার বদলে সেই একই বস্তাপচা কথা, “সাবধানে থাকবি”, “চোখ-কান খোলা রেখে চলবি”। এইসব ফালতু কথা শুনে শুনে কান পচে যাচ্ছিল। তাই বলেছে— রুমমেট টিজ করে। ফোন করবেনা। মেসেজ করবে। সময় বুঝে উত্তর দেব।

একদিকে ভালোই হয়েছে। আর ফোন করেনা। তাছাড়া এখন খুব একটা বাড়িতেও যাওয়া হয়না সাঁঝবাতির। তাতে অবশ্য সাঁঝবাতির বাড়ি থেকে কোন অনুযোগ নেই। দুই দাদা বিয়ে করে দুটো ঘর দখল করেছে। প্রথম প্রথম প্রতি সপ্তাহে সাঁঝবাতি যখন নিয়মিত বাড়ি যেত, একেক সপ্তাহে পালা করে একেক দাদাকে বাইরের ঘেরা বারান্দায় শুতে হত। তাই সাঁঝবাতি এখন সপ্তাহান্তে বাড়ি না গেলে খুব একটা অসুবিধা হয়না কারো। বরং সুবিধাই হয় বোধহয়। আর সাঁঝবাতিও খুব একটা ফিরতে চায়না। ও ফিরবে জানলেই তো সেই স্টেশনে সুবিনয়দার সাইকেল নিয়ে অপেক্ষায় থাকা। তারপর সাইকেল চেপে বাড়িতে ফেরা। ভালো লাগেনা এখন। আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হলেও এখনও স্কুটি বা বাইক কিনবেনা কিছুতেই। সেই সারাদিন সাইকেল করে ছাত্র পড়িয়ে একই জামা গায়ে থাকা। শেষ যেদিন গেছিল সেদিন তো সাঁঝবাতি বলেই ফেলেছিল,

— বড্ড ঘামের গন্ধ আসে তোমার গা থেকে সুবিনয়দা। একটু ডিও স্প্রে করলে পারো তো।

হেসেছিল সুবিনয়দা।

— ওসব আমার লাগেনা রে। ঘামের গন্ধে মিশে থাকে জীবনের ছাপ। আমি ছা-পোষা ঘরের ছেলে। সাধারণ স্কুল মাস্টার। গ্রামে পড়াতে যাই রে। আমার গায়ের ঘামের গন্ধে মিশে থাকে ঐ ছেলেমেয়েগুলোর স্বপ্ন। তুই বুঝবি না রে। তোর গায়ে শহরের রঙ লেগেছে।

খুব বিরক্ত হয়ে আর কথা বাড়ায়নি সাঁঝবাতি। আগে আগে অনেক বলেছে শহরের দিকের স্কুলে বদলি নিতে। তারপর দুজনে মিলে একটা ঘর। এখন আর বলেনা।

এসব ভাবনার মাঝেই কানে আসে— হেই বাতি।

২)

ঝিমঝিম করা নেশার চোখে ক্লিনশেভড সৌম্যদীপকে ফিল্মের নায়কদের মতো লাগে। আজ নিয়ে দুদিন দেখা। প্রথমদিন মোহিনী আলাপ করিয়েছিল অফিসের সামনে। তারপর আজ। দুদিনই সৌম্যদীপের চোখে নিজের প্রতি মুগ্ধতার ছাপ দেখেছে সাঁঝবাতি। আজ তো গাড়িতে সৌম্যদীপের পাশে বসেই এসেছে। পিছনের সিটটা মোহিনী আর ওর বয়ফ্রেন্ডের জন্য ছিল। ড্রাইভ করতে করতে সৌম্যদীপের সপ্রতিভ কথা, সিটবেল্ট বেঁধে দেবার সময়ে মাঝেমাঝে হাতের আলতো ছোঁয়া বেশ ভালো লাগছিল সাঁঝবাতির। মনে মনে তুলনাও করছিল সুবিনয়দার সাথে। সুবিনয়দার মতো একদমই না। অনেক স্মার্ট। আরে স্মার্ট না হলে কি অত কনফিডেন্টলি ড্রিংকসের গ্লাসটা এগিয়ে দিতে পারতো সাঁঝবাতির দিকে!

— হ্যাভ ওয়ান মোর প্লিইইজ।

এমন অনুরোধ কি ফেরানো যায়? বেশ আবেশ মাখা চোখে গ্লাসটা নেয় সাঁঝবাতি। ছোট্ট সিপ দিয়ে টেবিলে রাখে।

মোবাইলটা ঠিক এইসময়ই ভাইব্রেট করে। হোয়াটসঅ্যাপ পপ আপ ভেসে ওঠে। সাঁঝবাতি আর সুবিনয়দার একসাথে তোলা অনেক পুরনো ছবি ভাসে। লেখা উঠে আসে।

“খুব ব্যস্ত তুই। তাই বিরক্ত করি না। কিন্তু একটা কথা….”

পুরো মেসেজটা পড়া হয় না। মোহিনীর কেক কাটার সময় হয়ে গেছে। মোবাইলটা টেবিলে রেখেই উঠে যায় সামনে। কেক কাটা, মোহিনিকে ওর ফিয়ান্সের প্রোপোজ করা এসব কিছুর মাঝেই কোন অতল থেকে স্মৃতিরা ভেসে ওঠে সাঁঝবাতির চোখে।

প্রতিবার ওর জন্মদিনে মোহনচূড়া আর পলাশের গুচ্ছ এনে দিত সুবিনয়দা। পড়ার বইয়ের মাঝে প্রথম খুঁজে পেয়েছিল সুবিনয়দার মনের কথা। এমন ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে কেতাদুরস্ত প্রোপোজ করা ছিল না। লেখা ছিল,

“সাঁঝ তোকে খুব ভালোবাসি রে। সবসময় তোর পাশে থাকতে চাই।”

কায়দা ছিল না ঠিকই তবে বড়ো আন্তরিকতা ছিল কথাগুলোয়। সাঁঝবাতির বুকটা হঠাত্‍ তোলপাড় করে ওঠে। আকাশ থেকে এক দু ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়ে গায়ে। রুফটপ রেস্তোরাঁর সাজিয়ে রাখা টবের মাটি থেকে সোঁদা গন্ধ আসে নাকে। সবাই তাড়াহুড়ো করে ওপেন টেরেস ছেড়ে আচ্ছাদিত অংশে মাথা গুঁজতে দৌড়ায়। সাঁঝবাতির মনে পড়ে এমনই এক বৃষ্টিভেজা দিনে দুটো পুরুষালি ঠোঁটের প্রথম চুম্বন স্পর্শ।

— বাতি! কি করছিস? তাড়াতাড়ি ভেতরে আয়

ফেইসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করুন :

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সমজাতীয়
© All rights reserved © 2022 swaptasora
কারিগরি সহযোগিতায় : মোস্তাকিম জনি